শ্রীলঙ্কায় সংকট কাটাতে ঋণ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা
অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। এর জেরে গত বছর বিক্ষোভ শুরু হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে। ক্ষমতা হারিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবোয়া রাজাপাকশে। শ্রীলঙ্কার চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) একটি পরিকল্পনা নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খবর এএফপির।
প্রতিবেদনে ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি জানায়, গত মার্চে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চেয়েছিল শ্রীলঙ্কা সরকার। আইএমএফের সঙ্গে বেইল আউট চুক্তির শর্তের অধীনে ভর্তুকি কমানো, কর দ্বিগুণ করা এবং শত শত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বেসরকারিকরণ করে শ্রীলঙ্কা। এসব শর্ত পূরণের পরেই দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ঋণ পুনর্গঠনের এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
আইএফএমের সঙ্গে বেইল আউট চুক্তি অনুযায়ী, দেউলিয়া হয়ে যাওয়া এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির আর্থিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে আগামী চার বছরের মধ্যে দেশটির ঋণ দুই তৃতীয়াংশ কমাতে হবে।
আজ শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, তারা মার্কিন ডলারের বন্ড ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে ফেলবে। শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক মোট ঋণের এক কোয়ার্টারেরও বেশি বন্ডে।
দ্বিপাক্ষিক চুক্তি দিয়ে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ একবারেই কম নয় শ্রীলঙ্কার। এসব ঋণ নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে নেওয়া ঋণ পরিশোধে আরও ১৫ বছর সময় প্রয়োজন। এ সময়ে বছরে সুদের হার দেড় শতাংশে স্থির থাকবে। এবং আগামী নয় বছরে সুদ দেওয়া স্থগিত থাকবে।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নান্দালাল ওয়েরসিংহে বলেন, ‘আমরা যেমনটা চাচ্ছি, নতুন পরিকল্পনায় তাই তুলে ধরা হয়েছে।’ দ্বিপাক্ষিক ঋণ দাতাদের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছেও বলে জানান এই ব্যাংকার।
প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, গত আগস্টের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পুনর্গঠন সম্পন্ন হবে বলে আশা করেছিল কলম্বো। কিন্তু, সেই আশায় পানি দিয়ে দেয় দেশটিকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া দেশ চীন। ঋণের অর্থ কমানোর পরিবর্তে পুরোনো পরিশোধ করায় আরও বেশি ঋণ দিতে চেয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশটি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে যত ঋণ রয়েছে তার ৫২ শতাংশই দিয়েছে চীন। এই অঞ্চলে ঋণ দেওয়ায় এরপরেই রয়েছে জাপান ও ভারত।
চার হাজার ৬০০ কোটি ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে গত বছরের এপ্রিলে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। খাদ্য, তেল ও ওষুধ আমদানির জন্য পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা নেই তাদের।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার জেরে মাসব্যাপী বিক্ষোভ হয় শ্রীলঙ্কায়। গত বছরের জুলাইয়ে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে। দেশটিতে মূল্যস্ফীতি গত সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৬৯ দশমিক আট শতাংশে পৌঁছায়। গত বছরে দেশটির অর্থনীতি সংকুচিত হয় সাত দশমিক আট শতাংশ।
রাজাপাকসের উত্তরসূরি রনিল বিক্রমাসিংহে আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, কর দ্বিগুণ করেছেন, ভর্তুকি বাতিল করেছেন। এতে করে দেশটিতে রাজস্ব ঘাটতি কমে গেছে। বিক্রমাসিংহের সরকার ঋণ পুনর্গঠন প্রস্তাবে ভোটাভুটির জন্য আগামীকাল (শনিবার) পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশন ডেকেছে। একইসঙ্গে আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে টানা পাঁচদিনের জন্য ব্যাংকগুলোকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ঋণ পুনর্গঠনে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা আগামী মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। কারণ, দিনটিতেই সবগুলো ব্যাংক খোলা হবে।