ভারতের সূর্য অভিযান শুরু হচ্ছে আজ
ভারতীয় নভোযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস গেড়েছে গত ২৩ আগস্ট। চন্দ্রাভিযানে সফলতা পাওয়ার পরপরই দেশটি ঘোষণা দেয় সূর্য অভিযানের। আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) সূর্যের উদ্দেশে নিজেদের প্রথম পর্যবেক্ষণ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দেশটি। খবর বিবিসির।
ব্রিটিশ গণামধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সৌর অভিযানে ব্যবহার করা হবে আদিত্য-এল ১ নামের মহাকাশযান। দেশটির স্থানীয় সময় আজ বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে এটি সূর্যের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হবে। মহাকাশযানটি পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করবে, যা পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরুত্বের মাত্র এক শতাংশ।
ভারতের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরো বলছে, এই দূরুত্ব অতিক্রম করতে আদিত্য-এল১ এর মহাকাশযানটির সময় লাগবে চার মাস। সূর্য নিয়ে গবেষণায় এটিই হচ্ছে ইসরোর প্রথম অভিযান। সূর্যকে নিয়ে গবেষণার এই মিশনের নাম দেওয়া হয়েছে সুরিয়া, যা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একজন দেবতার নাম।
বিবিসি জানিয়েছে, আদিত্য-এল ১ মহাকাশযানটি পৃথিবী ও সূর্যের মধ্যবর্তী ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে স্থাপন করা হবে। কক্ষপথের এই পয়েন্টের বড় সুবিধা হলো, সেখান থেকে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সব সময় সূর্যের বিভিন্ন কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির তথ্যমতে, ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট হলো এমন একটি স্থান যেখানে সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যকর্ষণ শক্তি থাকে না।
আদিত্য-এল ১ মহাকাশযানটি ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে স্থাপন করা হলে এটি পৃথিবীর মতো একই গতিতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে সক্ষম হবে। এতে করে স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য খুব কম জ্বালানির প্রয়োজন হবে। ইসরো জানিয়েছে, মহাকাশযানটি ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট স্থাপন না করার আগে এটি পৃথিবীকে বেশ কয়েকবার প্রদক্ষিণ করবে।
এই অভিযানে কত খরচ হবে ইসরো তা না জানালেও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, এতে চার কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার বা ৩৭৮ কোটি রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) খরচ হবে।
ইসরো বলছে, মহাকাশযানটিতে সাতটি বৈজ্ঞিানিক যন্ত্র থাকবে, যা পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হবে। এই গবেষণা অভিযান বিজ্ঞানীদের সৌর বায়ু, সৌর শিখা এবং পৃথিবী ও এর কাছাকাছি মহাকাশে সেগুলোর প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করবে।
ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী মাইলস্বামী আন্নাদুরাই বলেন, ‘সূর্য ক্রমাগত বিকিরণ, তাপ ও চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রবাহের মাধ্যমে পৃথিবীর আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে। এটি মহাকাশের আবহাওয়াকেও প্রভাবিত করে। স্যাটেলাইট কীভাবে কাজ করবে, তা মহাকাশের আবহাওয়ার ওপর অনেকটা নির্ভর করে। সৌর বায়ু বা ঝড় স্যাটেলাইটের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু, মহাকাশের আবহাওয়া সম্পর্কে আমাদের অনেক কিছুই অজানা।’