১৭ লাখ আফগানসহ অবৈধ অভিবাসীদের পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ
পাকিস্তানে অবস্থানরত অনিবন্ধিত বিদেশি নাগরিক বিশেষ করে প্রায় ১৭ লাখ আফগান নাগরিককে আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দেশ না ছাড়লে তাদের জোর করে বের করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়টি।
এ বছর পাকিস্তান জুড়ে ২৪টি আত্মঘাতী বোমা হামলার মধ্যে ১৪টিই চালিয়েছে আফগান নাগরিকরা এমন তথ্য দিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘আমরা তাদের নভেম্বরের ১ তারিখ নাগাদ সময় বেঁধে দিয়েছি।’ খবর আলজাজিরার।
বুগতি জানান পাকিস্তানে থাকা ৪৪ লাখ আফগান শরণার্থীর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ ৩০ হাজার আফগান নাগরিকের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই।
বুগতি বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানের ভেতর থেকে হামলার শিকার হচ্ছি আবার এখানকার আফগান নাগরিকরা আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। আমাদের কাছে এর প্রমাণ রয়েছে।’
১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর থেকে পাকিস্তানে শুরু হয় আফগান শরণার্থীর ঢল। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ১৩ লাখ আফগান পাকিস্তানে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত এবং আরও প্রায় আট লাখ ৮০ হাজার আফগানের আইন অনুসারে সেখানে থাকার বৈধতা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুগতি বলেন, ‘যদি তারা না যায়, তবে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারের সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ব্যবহার করে তাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হবে।’
তবে এটা এই মুহূর্তে পরিষ্কার নয় যে, কীভাবে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ অনিবন্ধিত অভিবাসীদের দেশত্যাগে বাধ্য করবে বা বহিষ্কারের জন্য খুঁজে বের করবে।
এদিকে, পাকিস্তানে এই ঘোষণাকে ইসলামাবাদের আফগান দূতাবাস ‘হয়রানি’ হিসেবে অভিহিত করেছে। গত মাসে দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রতিবেশি দেশ দুটোর সীমান্তে সংঘর্ষের পর এই ঘোষণা সম্পর্ককে আরও তলানিতে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে দূতাবাসটি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে আফগান দূতাবাস জানায়, গত দুই সপ্তাহে এক হাজারেরও বেশি আফগান নাগরিককে আটক করা হয়েছে যাদের অর্ধেকেরই পাকিস্তানে থাকার আইনগত অধিকার রয়েছে।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পেশোয়ারের একজন ফল বিক্রেতা ফজল রেহমান জানান, গত ৩০ বছর থেকে তার পরিবার পাকিস্তানে বসবাস করছে এবং তার ছেলেমেয়েরা কখনো আফগানিস্তানে যায়নি। তিনি কখনো পাকস্তানি কর্তৃপক্ষের কাছে তার নাম নিবন্ধনের প্রয়োজন অনুভব করেননি। তবে এখন মনে করছেন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বুগতি জানান, ১ নভেম্বর থেকে কেবলমাত্র বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসাধারী আফগানদের পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে, আফগান নাগরিকদের সম্পত্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
উল্লেখ্য, বছরের পর বছর পাকিস্তানে আসা আফগান নাগরিকরা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রকে ভ্রমণ নথি হিসেবে ব্যবহার করতে পারতো।