ঈদ সালামিতে এখন আইফোন, স্বর্ণের নোট!
ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি-নির্ভর বিশ্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঐতিহ্যগত ঈদ সালামি বিতরণেও এখন এসেছে নতুনত্ব। দেশটিতে মাত্র ৫ বা ১০ দিরহামের নোটে ছোটদের ঈদ সালামি প্রদান এখন অতীত। এ যুগে ঈদ সালামি হিসেবে ডিজিটাল উপহার কার্ড, আইফোন, এমনকি ২৪ ক্যারেটের সোনার নোট প্রত্যাশা করে শিশু-কিশোররা, তরুণ-তরুণীরা।
ঈদ সালামি ঈদি নামেও পরিচিত, যা মুসলিম দেশগুলোর একটি ঐতিহ্য। যাতে পরিবারের বড় সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদের নগদ অর্থ উপহার দেন। মুসলমানদের দুটি বড় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আল আজহা উদযাপনের আনন্দ বহু গুণে বাড়িয়ে দিতে যুগ যুগ ধরে ঈদি প্রদানের এ প্রচলন দেখা যায়। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঈদের সালামিতেও যুক্ত হয়েছে আইফোনের মতো বিলাসবহুল পণ্য।
দুবাইয়ের বাসিন্দা হামদা কে. তার অভিজ্ঞতা বিনিমিয় করেছেন সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের সঙ্গে। তিনি জানান তার ১০ বছর বয়সী শিশুর ঈদি হিসেবে নতুন আইফোন চাওয়ার কথা।
হামদা বলেন, ‘আজকাল শিশুরা বিশেষ অনুরোধ করছে এবং আইফোনের মতো দামি উপহার চাইছে। আমরা তাদের যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, ঈদি মানে সবচেয়ে দামি উপহার অনুরোধ করা নয়। আমরা ছোটবেলায় উৎসবের সময় এমনটি চাইনি; সর্বোপরি, ঈদ একটি আনন্দের উপলক্ষ।’
হামদা স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আগের দিনগুলোতে ঈদের সালামি হতো ৫ বা ১০ দিরহাম, আর আশপাশে কেউ যদি বেশি পেত তা সর্বোচ্চ ২০ দিরহাম। এই ঈদ সালামি জমিয়ে মিনি মার্কেটে যেয়ে প্রচুর চকলেট কেনা হতো এবং সেটিকে বলা হতো সর্বকালের সেরা ঈদ।’
আবুধাবির বাসিন্দা ইমান এলশামসি বলেন, ‘আমার ভাগ্নে ও ভাগ্নিদের জন্য আমাকে ঈদির বাজেট সেট করতে হয়, কিন্তু আজকাল এমনকি বড়রাও চাইছে।’ গত বছর ঈদ সালামি দিতে তাকে দুই হাজার দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা) পর্যন্ত তুলতে হয়েছিল বলেও জানান।
‘স্বর্ণের নোট’
ঈদি হিসেবে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরাও স্বর্ণের নোটের মতো উদ্ভাবনী পণ্য বাজারে আনতে প্রতিযোগিতা করছেন। ডায়ান জুয়েলারি প্রথমবারের মতো ২৪ ক্যারেটের ‘সোনার নোট স্মারক’ বাজারে এনেছে। ঈদি হিসেবে এটি একটি মূল্যবান উপহার। প্রতিটি নোটের মূল্য ১৫৯ দিরহাম (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় চার হাজার ৭৫৪ টাকা) এবং এতে শূন্য দশমিক এক গ্রাম (০.১) সোনা রয়েছে।
ডায়ান জুয়েলারির স্বত্বাধিকারী রাহুল সাগর বলেন, ‘এই স্মারকটি স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অনন্য উপহারটি মানুষ ভালোবেসে গ্রহণ করছে।’
রাহুল আরও বলেন, ‘গত কয়েকদিনে স্বর্ণের নোট স্মারকটির স্টক শেষ হয়ে গেছে। ঈদি হিসেবে উপহার প্রদানের জন্য আমাদের শত শত গ্রাহক এটি কিনেছেন। আমরা এখন প্রি-অর্ডার নিচ্ছি এবং গত কয়েক ঘণ্টায় ৩০০টি অর্ডার পেয়েছি।’
বছরের পর বছর ধরে ঈদ সালামি হিসেবে "নগদ অর্থ" উপহার থেকে বদলে এখন এটি আরও বৈচিত্র্যময় ও সৃজনশীল উপহারে পরিণত হয়েছে।
দুবাইয়ের বাসিন্দা মাদিহা মোহাম্মদ বলেন, তিনি তার বন্ধু এবং পরিবারের শিশুদের ডিজিটাল উপহার কার্ড দিতে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় আমরা একে অন্যের সন্তানদের উপহার দেই। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমি সাজানো কাগজের কার্ডে সুগন্ধি যুক্ত করে নগদ অর্থ রাখতাম। শিশুরা এটি পছন্দ করত।’
কোভিডের সময় থেকে মাদিহা ডিজিটাল উপহার কার্ড প্রদান করেন। তিনি বলেন, ‘এটি সত্যিই সহজ মাধ্যম। আমি শিশুদের বলেছি, উপহার কার্ডটি তাদের ই-মেইল করা হবে। শিশুরা কতটা উপভোগ করেছিল, তা আমাকে অবাক করেছিল। বেশিরভাগ মায়েরা জানিয়েছেন, শিশুরা এটি কেনার জন্য ব্রাউজ করে সময় কাটিয়েছে এবং এটি নিয়ে বেশ উৎসাহিত ছিল। তাই এখন আমি সেই ডিজিটাল উপহার কার্ডই দেই।’