মালদ্বীপের নির্বাচনে চীনপন্থি মুইজ্জুর দলের বড় জয়
মালদ্বীপের এবারের নির্বাচনকে প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর জন্য কঠিন পরীক্ষা বলে মনে করা হচ্ছিল। কারণ, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতবিরোধী অবস্থান প্রকাশ করে চীনপন্থি মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ ছিল তার পূর্বসূরি ভারতপন্থী ইব্রাহিম মোহামেদ সালেহর দল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) হাতে। ফলে মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) এবার পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে কি না, তা ছিল চ্যালেঞ্জ। অবশেষে সেই চ্যালেঞ্জ জিতেছে পিএনসি। নির্বাচনে গতকাল রোববার (২১ এপ্রিল) ভোটগ্রহণ শেষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পেয়েছে দলটি। খবর এএফপির।
দেশটির পার্লামেন্ট পিপলস মজলিশের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নির্ধারণে রোববার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ চলে। দেশটির নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৯৩ আসনের মধ্যে পিএনসি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে। যদিও ৮৬টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ সাতটি আসনের ফল ঘোষণা বাকি থাকতেই মুইজ্জুর দল ৬৬টি আসনে জয় পায়।
মালদ্বীপের স্থানীয় সংবাদপত্র ‘মিহারু’র প্রতিবেদন অনুসারে, এই নির্বাচনে ৪১ জন নারী প্রার্থী অংশ নেয়। তবে, তাদের মধ্যে কেবলমাত্র তিনজন জয়ী হয়ে আসতে পেরেছেন। সেই তিনজনও মুইজ্জুর দলেরই সদস্য।
এএফটির প্রতিবেদন বলছে, দেশটিতে সরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে। তারপর মে মাসের শুরুতে বসবে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন।
এই নির্বাচনকে চীনের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থাপনে মুইজ্জুর পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছিল বিতর্কিতভাবে পুনরুদ্ধার করা জমিতে হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ। এ মাসের নির্বাচনি প্রচার চলাকালেই মুইজ্জু চীনা রাষ্ট্রীয় কোম্পানির সঙ্গে তার হাইপ্রোফাইল অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনার বিষয়ে চুক্তি সেরে ফেলেন। তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন মালদ্বীপের বিশাল সমুদ্রসীমা নজরদারির কাজে নিয়োজিত ৮৯ জন ভারতীয় সৈন্যের বহরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও বেশ তৎপর রয়েছে। এসব পরিকল্পনা মুইজ্জুকে জিততে সহযোগিতা করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিষুবরেখা জুড়ে ৮০০ কিরোমিটার ব্যাপ্তি নিয়ে এক হাজার ১৯২টি প্রবাল দ্বীপের এই দেশটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে নিজের অস্তিত্বের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। প্রাচীন সাদা বালির সমুদ্র সৈকত ও নিরিবিলি রিসোর্টের কারণে মালদ্বীপ অন্যতম শীর্ষ বিলাসবহুল অবকাশ গন্তব্য হিসেবে বিশেষভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। যদিও সম্প্রতি এটি অন্যতম ভূরাজনৈতিক ‘হটস্পট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যার প্রধান কারণ এই দ্বীপপুঞ্জের পাশ ঘিরেই রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগকারী আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যের রুট।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও দেশটির সাবেক নির্মাণবিষয়ক মন্ত্রী মুইজ্জু বেশ কিছু উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি জমি পুনরুদ্ধার ও দ্বীপগুলোকে উঁচু করে ফেলার মতো কাজ যার ফলে সমুদ্রের ঢেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না নাগরিকদের বসবাসের ক্ষেত্রে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, তার এই পরিকল্পনা বন্যার ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।