নতুন করে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত, বাড়ছে সংকট
২০২১ সালে ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সু চি সরকারের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা উত্তেজনার মধ্যে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে দেশটির গেরিলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘাত চলছেই। গত বছরের নভেম্বরে আরাকান আর্মি (এএ) বিদ্রোহীরা ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রাখাইন আক্রমণ করার পর থেকে রাজ্যটিতে এখনও পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত।
রাখাইন রাজ্যে এ সংঘাতে রোহিঙ্গাদের হত্যাসহ ঘরবাড়িতে আগুন দিচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এর ফলে নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট বাড়ছে। জাতিসংঘের ধারণা সম্প্রতি প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। এ সংকট মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশগুলোকে নতুন করে আসা শরণার্থীদের ‘কার্যকর সুরক্ষা প্রদানের’ আহ্বান জানিয়েছেন।
মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা নাগরিকরা দীর্ঘকাল বহিরাগত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে মিয়ানমারে। তাদের জাতীয়তার স্বীকৃতি প্রদান করতে নারাজ মিয়ানমার সরকার। আরাকান আর্মি (এএ) বলছে, তারা রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। এখনও রাখাইন রাজ্যে আনুমানিক ছয় লাখ নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম বাসিন্দা রয়েছে, যারা তাদের মাতৃভূমিকে জীবন ও মরণের শেষ ঠিকানা হিসেবে বেছে নিয়েছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সহিংস হামলার শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়, নারীদের নির্যাতন, অপহরণ করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সামরিক বাহিনীর এ তাণ্ডবকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের আদালতে অভিযোগও রয়েছে।
গত শুক্রবার (১৭ মে) জেনেভায় সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রসেল জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বুথিডং ও মংডু শহরে সামরিক বাহিনী ও গেরিলা সংগঠনগুলোর লড়াইয়ের কারণে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আইনের উল্লেখ করে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে এলিজাবেথ থ্রসেল বলেন, আনুমানিক ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে নাফ নদী এলাকায় পালিয়ে গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকর সুরক্ষা প্রদান এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংহতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইতোমধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা থাকায় বাংলাদেশে সরকার আরও বেশি শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে অনিচ্ছুক, যার ফলে নতুন করে আসা শরণার্থীরা মিয়ানমার সীমান্তে আটকা পড়েছে। মানবাধিকার অফিসের মিয়ানমার টিমের প্রধান জেমস রোডেহেভার বলেছেন, রোহিঙ্গারা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জেমস রোডেহেভার বলেন, তার দল পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে। এ ছাড়া স্যাটেলাইট ছবি, অনলাইন ভিডিও ও ক্ষয়ক্ষতির ছবি ইঙ্গিত দেয় যে, বুথিডং শহরটির বেশিরভাগ এলাকাই ভীষণভাবে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া এখানে কমপক্ষে চারটি শিরশ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুসারে, আরাকান আর্মির সদস্যরাই রোহিঙ্গাদের ওপর এই নৃশংসতা চালিয়েছে। এর আগেও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া আরাকান আর্মি ও সেনাবাহিনী দুপক্ষই রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে টানতে জোরদজবরদস্তি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের বলা হচ্ছে, দলে যোগ না দিলে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হবে।