ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চান জার্মানির চ্যান্সেলর
ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়াতে চান জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। তিনদিনের ভারত-সফর শেষে দেশটির সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বললেন জার্মানির চ্যান্সেলর।
এটা ছিল ভারত ও জার্মানি দুই দেশের মধ্যে সপ্তম আন্তঃসরকার আলোচনা। তাই শলৎজ একা আসেননি। তার সঙ্গে ছিলেন অর্থ ও পরিবেশমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শ্রম ও সামাজ বিষয়কমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, একাধিক সংসদীয় কমিটির প্রধান এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা। নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও ভারতের পক্ষে ছিলেন প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, শিল্প ও বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, স্কিল ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী।
আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে ২৭টি চুক্তি সই হয়েছে। সেগুলো মূলত নবায়নযোগ্য বা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, গবেষণা ও ক্রিটিক্যাল টেকনোলজির ক্ষেত্রে।
শলৎজ জানিয়েছেন, তিনি ভারতের সঙ্গে সামরিক, বিশেষ করে অস্ত্র ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়াতে চান। ২০ বছর আগে দুই দেশের মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ চুক্তি সই হয়েছিল। সেই সম্পর্ককে আরো বাড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন শলৎজ ও মোদি।
এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্স অফ জার্মান বিজনেস ২০২৪-এ শলৎজ বলেছেন, ‘ভারত থেকে আরো দক্ষ শ্রমিক চায় জার্মানি। জার্মানির শ্রম বাজারে প্রতিভাকে স্বাগত জানানো হয়। দক্ষ শ্রমিকদের জন্য জার্মানির দরজা খোলা আছে। অনিয়মিত অভাবাসনের ওপর জার্মানি কড়াকড়ি করলেও দক্ষ শ্রমিকদের জন্য তা করা হচ্ছে না।’
মোদির সঙ্গে আলোচনার পর শলৎজ বলেছেন, মেডিসিন, নার্সিং ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে জার্মানি জরুরি ভিত্তিতে দক্ষ শ্রমিক চায়।
শলৎজ বলেছেন, ‘ভারত গ্রিন হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে গ্লোবাল হাবে পরিণত হচ্ছে। আমরা তার অংশীদার হতে চাই। এই সফরে ভারত ও জার্মানির মধ্যে যে চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে, তার অনেকগুলোই গ্রিন এনার্জি নিয়ে।’
জার্মানির চ্যান্সেলর জানিয়েছেন, ইইউর মধ্যে জার্মানিই ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। এই সম্পর্ক তিনি আরও বাড়িয়ে নিয়ে যেতে চান। তিনি চান, ভারতের সঙ্গে ইইউর উচ্চাকাঙ্খী বাণিজ্য চুক্তি হোক। এর ফলে সকলেই উপকৃত হবেন।
শলৎজ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার স্থায়িত্বের প্রশ্নে ভারতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারত যেভাবে ইউক্রেনের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে, তাতে তিনি খুশি। তবে ইউক্রেনের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা বজায় রেখে সমাধান করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমানো দরকার। এর জন্য যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি খুবই জরুরি। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আলোচনা খুবই জরুরি।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, “জার্মানির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের মধ্যে স্পষ্টতা আছে। দুই দেশের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে কূটনীতির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়াটা জরুরি। যুদ্ধক্ষেত্র কোনো সমস্যা সমাধানের জায়গা হতে পারে না।”
মোদি বলেছেন, “বিংশ শতাব্দীতে যে গ্লোবাল ফোরাম তৈরি হয়েছিল, তা একুশ শতকের সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। সেজন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার দরকার। কয়েক দশক ধরে ভারত বলছে, ১৪০ কোটির দেশকে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য করা উচিত।”
মোদি ইন্দো-প্যাসিফিকের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এখানে চীন তার প্রভাব বাড়াতে চাইছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, জার্মানির সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সামরিক সম্পর্ক আছে। এই ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার যে শক্তি আছে, তার পুরো সদ্ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
শলৎজ ও মোদি দুজনেই প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। ঠিক হয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো হবে।
যৌথ ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে. প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রযুক্তি, উৎপাদন, এবং প্রতিরক্ষা সামগ্রী একসঙ্গে উৎপাদন করা হবে।
জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এই বছরের প্রথম ছয় মাসে জার্মানির কাছ থেকে যে সব দেশ অস্ত্র পেয়েছে, তার মধ্যে ভারত তিন নম্বরে আছে। এর আগে জার্মানি ভারতকে ছোট অস্ত্র ও স্পেয়ার পার্টস বিক্রির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়তে থাকায় জার্মানি এই সিদ্ধান্ত নেয়। না হলে তারা ন্যাটোর বাইরের কোনো দেশকে ছোট অস্ত্র বিক্রি করে না।
জার্মানি থেকে ছয়টি সাবমেরিন কেনা নিয়ে ভারতের আলোচনা চলছে। তাছাড়া এয়ারবাস তাদের এ৪০০এম বিক্রি করতে চায়। এনিয়েও কথাবার্তা চলছে।