ডব্লিউএইচওর মাত্রার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি বিষাক্ত নয়াদিল্লির বাতাস
বিষাক্ত বাতাসের কারণে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির স্কুলগুলোতে আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) সশরীরে পাঠগ্রহণ বন্ধ ছিল। কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে অনলাইনে পাঠদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবস্থা কতটা খারাপ তা বিষাক্ততার মাত্রা পরীক্ষা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দৈনিক সহনীয় সর্বোচ্চ বিষাক্ততার মাত্রার চেয়ে নয়াদিল্লির বাতাস ৬০ গুণ বেশি বিষাক্ত। খবর এএফপির।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে সরকারের খণ্ড খণ্ড উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রয়াস ব্যর্থ হয়েছে আর এই বিষাক্ত পরিবেশকে প্রতিবছর রাজধানীতে কয়েক হাজার অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। পাশাপাশি শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে এই পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
বিষাক্ততার মাত্রা যাকে পিএম ২.৫ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাতে দেখা যায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী বিপজ্জনক কিছু অতিক্ষুদ্র উপাদান ফুসফুসের মাধ্যমে মানুষের রক্তপ্রবাহে মিশে যায়। আজ সোমবার সেই বিষাক্ততার মাত্রা নয়াদিল্লিতে প্রতি ঘনমিটারে ৯২১ মাইক্রোগ্রামে পৌঁছে গেছে। ডব্লিউএইচওর অস্বাস্থ্যকর মাত্রার হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ঘনমিটারে ১৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি ক্ষতিকর ক্ষুদ্র উপাদান থাকলেই তা ঝুঁকিপূর্ণ। আইকিউ এয়ার মনিটরের হিসাব বিশ্লেষণ করলেই এই তথ্য পাওয়া যাবে।
আলাদাভাবে বেশকিছু পর্যবেক্ষণ সংস্থার হিসাবে এই মাত্রা আরও বেশি থাকে। সরকার পরিচালিত একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী পিএম ২.৫ বিষাক্ততার মাত্রা কোথাও ১১১৭ মাইক্রোগ্রাম যা ডব্লিউএইচওর সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৭৪ গুণ বেশি।
বাতাসের বিষাক্ততার ভয়াবহতা তুলে ধরে নয়াদিল্লিতে সুবোধ কুমার নামে ৩০ বছর বয়সী একজন রিকশাচালক বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে আমার চোখ ক্রমাগত জ্বলছে।’ রাস্তার পাশের একটি ভাসমান দোকানে নাস্তার ফাঁকে তিনি বলেন, ‘দুষণ থাকুক আর না থাকুক আমাকে রাস্তায় বের হতেই হবে। এ অবস্থায় এখন আমি কোথায় যাবো?’ সুবোধ কুমার আরও বলেন, ‘আমাদের ঘরে বসে থাকার কোনো উপায় নেই, আমাদের জীবনযাত্রা, খাবারের যোগান সবকিছুই খোলা জায়গায়।’
ভারতের উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু জায়গায় বাতাসের এই বিষাক্ততা ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি আগ্রায় তাজমহল দেখতে আসা পর্যটকরা মার্বেল পাথরের এই বিস্ময়কর কাঠামো দেখতে গিয়ে ধোঁয়াশার কারণে ভীষণ অসু্বিধায় পড়ছেন। বিষাক্ততার পরিধি শুধু ভারতই নয় প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের লাহোরেও টের পাওয়া যাচ্ছে।
প্রতিবছরই শীতকালে ধোঁয়া ও কুয়াশার মিশেল এই বিষাক্ত ধোঁয়াশা নয়াদিল্লির বাতাসকে কম্বলের মতো চেপে ধরে। জমি নিঙরানোর পর ফসলের অবশিষ্ট পুড়িয়ে ফেলার কারণে এই ধোঁয়ার সৃষ্টি হয় আর এর সঙ্গে যোগ হয় কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত মাসে এক রুলিংয়ে বলে পরিষ্কার বাতাস পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। আর সেটি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে নির্দেশনাও দেয় আদালত।