বিশ্বসেরা ১০০ বই
গুস্তাভ ফ্লোবার্টের ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’
ফ্রেঞ্চ লেখক গুস্তাভ ফ্লোবার্টের বিখ্যাত উপন্যাস ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’। মূলত এটি লেখা হয়েছে ফ্রেঞ্চ ভাষায়। পরে তা ইংরেজিসহ অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয় ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’কে।
১৮৬৯ সালের ১৭ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাসটি। ফ্লোবার্টের সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে জর্জ স্যান্ড, এমিলি জোলা উপন্যাসটির প্রশংসা করলেও হেনরি জেমস এর সমালোচনা করেছেন।
১৮৪৮ সালের ফরাসি বিপ্লবের সময় প্যারিসের প্রেক্ষাপটে এক তরুণের ভালোবাসা ও আবেগের গল্পই তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসটিতে।
বইটি প্রকাশের আগে ১৮৬৪ সালে গুস্তাভ লিখেছিলেন, ‘আমি আমার সময়ের পুরুষদের নৈতিক ইতিহাস নিয়ে লিখতে চাই। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, তাদের অনুভূতির ইতিহাস। এই বইটাতে (সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন) সেই ভালোবাসা ও আবেগ আছে। এটা সে রকম আবেগ, যেটা এখনকার দিনে পুরোমাত্রায় উপস্থিত, কিন্তু নিষ্ক্রিয়।’
এই উপন্যাসটিতে অনেক বাস্তব চরিত্র বা ঘটনাকে তুলে ধরেছেন গুস্তাভ। নিজের জীবনের অনেক ঘটনাও তিনি এখানে তুলে ধরেছেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’ উপন্যাসের মূল চরিত্র ফ্রেডরিক মরো। ১৮৪৮ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় নিজের চেয়ে বয়সে বড় এক নারীর প্রেমে পড়েন তিনি। প্যারিসে চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর মরোর মনের মধ্যে মাদামে আর্নোক্সের জন্য অস্থিরতা। প্রথম দেখাতেই মাদামে আর্নোক্সের প্রেমে পড়ে যায় মরো।
প্যারিস মরোর ভালো লাগে না। কারণ, সে বড় হয়েছে নগেন্ট-সুর-সিনে। সেই নিরিবিলি পরিবেশই তাকে বেশি টানে।
মরোর একমাত্র বন্ধু চার্লস ডেসলার্স চার্লসের সঙ্গেই থাকে সে। চার্লস তাকে বুদ্ধি দেয়, মসিঁয়ে আর্নোক্সের সঙ্গে গিয়ে দেখা করতে। তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হয়ে গেলে মাদামে আর্নোক্সের সঙ্গেও বন্ধুত্ব হয়ে যাবে তার।
প্যারিসে আইন নিয়ে পড়া শুরু করে মরো। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্যারিসের দৃশ্যপট পাল্টে যেতে থাকে। এসব ভালো লাগে না মরোর। ক্লাসে যাওয়া বন্ধ করে দেয় সে।
একসময় তার সুযোগ হয় মাদামে আর্নক্সের সঙ্গে দেখা করার। নিজের ভালোবাসার কথাও তাকে জানায় মরো। কিন্তু মাদামে আর্নেক্স তাকে ফিরিয়ে দেয়।
এর কয়েক বছর পর একদিন মাদামে আর্নেক্স দেখা করতে আসে মরোর সঙ্গে। মরোর প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করে সে। কিন্তু বৃদ্ধা মাদামে আর্নেক্সকে ফিরিয়ে দেয় মরো।
লেখক পরিচিতি :
গুস্তাভ ফ্লোবার্টের জন্ম ১৮২১ সালের ১২ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রনে। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ফ্লোবার্ট ছিলেন পঞ্চম।
তাঁর বাবা আচিলে-ক্লোফাস ফ্লোবার্ট ছিলেন রনের চিফ সার্জন। গুস্তাভের মা আনে জাস্টিন ক্যারোলাইন ছিলেন গুস্তাভের লেখালেখির অন্যতম প্রেরণা। গুস্তাভের নানাও ছিলেন একজন ডাক্তার।
১৮৫৭ সালে প্রকাশিত হয় ফ্লোবার্টের প্রথম উপন্যাস ‘মাদামে বোভারি’। এই উপন্যাস লিখতে তাঁর প্রায় পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। প্রথম বইয়ের মাধ্যমেই ব্যাপক পরিচিতি পান গুস্তাভ।
তবে তাঁর প্রথম কাজ ছিল ‘নভেম্বর’ নামের একটি উপন্যাসিকা। ১৮৪২ সালে বইটি লেখেন তিনি। এটি পরে প্রকাশিত হয়।
তাঁর অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’ (১৮৬৯), ‘থ্রি টেলস’ (১৮৭৭), ‘সালাম্বো’ (১৮৬২), ‘আ সিম্পল সউল’ (১৮৭৭), ‘নভেম্বর’ (১৮৪২)।
১৮৮০ সালের ৮ মে ফ্রান্সের কান্তেলুতে মারা যান গুস্তাভ।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এই তালিকাটি তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ জন লেখকের কাছে তাদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।