বিশ্বসেরা ১০০ বই
মার্ক টোয়েনের ‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব হাকেলবেরি ফিন’
মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের লেখা উপন্যাস ‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব হাকেলবেরি ফিন’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৪ সালের ডিসেম্বরে। প্রথমে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত হয় বইটি। পরের বছর ১৮৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি।
‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব টম সয়ার’-এর সিক্যুয়াল হিসেবে লেখা হয় বইটি। মিসিসিপি নদীসংলগ্ন মানুষ ও তাদের জীবনধারা এবং ওই এলাকার বর্ণনা সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে বাস করত আন্তেবেল্লাম সমাজ। তাদের জীবনকাহিনীর ওপর ভিত্তি করেই উপন্যাসটি লেখা হয়েছে। তবে উপন্যাসটি লেখার অন্তত ২০ বছর আগে আন্তেবেল্লাম গোষ্ঠী ও তাদের সমাজব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কাহিনী সংক্ষেপ
মোট ৪৩টি অধ্যায়ে ভাগ করে উপন্যাসটির গল্পবিন্যাস করা হয়েছে। এ উপন্যাসটি লেখা হয়েছে হাক ফিনের বয়ানে। শুরুতেই নিজের পরিচয় দিয়ে গল্প বলা শুরু করে হাকেলবেরি ফিন। হাক জানায় যে, সে তার বোন মিস ওয়াটসনের সঙ্গে থাকে। তাদের সঙ্গে আরো থাকেন একজন বিধবা, যার নাম ডগলাস।
এ দুজন হাককে ধর্মীয় শিক্ষা এবং আচার ব্যবহার শেখানোর জন্য নিয়ে এসেছে। কিন্তু সেদিকে মন নেই হাকের। সে রাতের বেলা পালিয়ে গিয়ে টম সয়ারের দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।
এরই মধ্যে ফিরে আসে হাকের বাবা পাপ ফিন। বাবা ফিরে আসার পরই হাকের মনে দুশ্চিন্তা দেখা দেয় যে, হয়তো আগের মতো আর স্বাধীনতা পাবে না সে। এবং সেটাই ঘটে। স্কুল বাদ দিয়ে হাককে অপহরণ করে তার বাবা চলে যায় মিসিসিপি নদীর ধারে একটা ছোট্ট কেবিনে।
প্রথমে সে খুশিই ছিল, কারণ ধর্মীয় বিধিনিষেধের মধ্যে তাকে আর থাকতে হচ্ছে না। কিন্তু দিন দিন বাবার অত্যাচার আর মারধরের মাত্রা বাড়তে থাকে। আর সে জন্যই পাহাড় থেকে নদীতে লাফ দিয়ে নিজের মৃত্যুর মিথ্যা নাটক সাজিয়ে পালিয়ে যায় হাক।
জ্যাকসনের দ্বীপে (জ্যাকসন’স আইল্যান্ড) গিয়ে পৌঁছায় হাক। সেখানে তার সঙ্গে দেখা হয় জিমের। জিম হচ্ছে হাকের বোন মিস ওয়াটসনের ক্রীতদাস। জিমকে মিস ওয়াটসনই পাঠিয়েছেন হাককে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, কারণ মিস ওয়াটসনের ভয় ছিল হয়তো হাককে বিক্রি করে দেবে তার বাবা।
হাক ও জিম বুঝতে পারে, তাদের খুঁজতে দলবল নিয়ে জ্যাকসন দ্বীপে আসছে হাকের বাবা। বাঁচার জন্য তাই পালানো শুরু করে দুজন। জিম পরিকল্পনা করে, পালিয়ে ইলিনয়ের কায়রো শহরে চলে যাবে তারা।
আর এভাবেই শুরু হয় দাসত্ব থেকে জিমের মুক্তির সংগ্রাম। আর তার সঙ্গে থেকে হাকও নতুন করে আবিষ্কার করে দাসত্ব এবং স্বাধীনতার পার্থক্য। এ অভিযানে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয় জিম ও হাক। এসব বাধা অতিক্রম করে মুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তারা।
লেখক পরিচিতি
স্যামুয়েল লংহর্ন ক্লেমেন্স জন্মেছিলেন ১৮৩৫ সালের ৩০ নভেম্বর। পরবর্তী সময়ে তিনি ‘মার্ক টোয়েন’ ছদ্মনামে লেখা শুরু করেন। তিনি বড় হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির হান্নিবালে। সে সময়ে শহরটিতে মাত্র পাঁচশর মতো বাসিন্দা ছিল। ওই অঞ্চলের ওপর ভিত্তি করেই লেখা হয়েছে টম সয়ার ও হাকেলবেরি ফিনের অভিযানের গল্পগুলো।
কর্মজীবনের শুরুতে একজন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেন মার্ক টোয়েন। এর পর কয়েক দিন পত্রিকায় লেখালেখি করে মিসিসিপি নদীতে রিভারবোট পাইলট হিসেবে কাজ শুরু করেন। রম্য রচনা দিয়ে পত্রিকার জন্য লেখালেখি শুরু করেছিলেন মার্ক টোয়েন। এ ছাড়া বিভিন্ন কলাম ও ভ্রমণকাহিনী লিখতেন তিনি।
১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয় মার্ক টোয়েনের ছোটগল্প ‘দ্য সেলিব্রেটেড জাম্পিং ফ্রগ অব কালাভেরাস কাউন্টি’। এই গল্প ছাপা হওয়ার পর মার্ক টোয়েনকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
মার্ক টোয়েনের বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘দ্য প্রিন্স অ্যান্ড দ্য পপার’ (১৮৮১), ‘লাইফ অন দ্য মিসিসিপি’ (১৮৮৩), ‘আ কানেক্টিকাট ইয়াংকি ইন কিং আর্থার’স কোর্ট’ (১৮৮৯), ‘পুডনহেড উইলসন’ (১৮৯৪)।
এর পাশাপাশি কলাম ও ছোটগল্পেরও কয়েকটি বই বের হয় মার্ক টোয়েনের। এসব বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দ্য ১,০০০,০০০ ব্যাংক—নোট অ্যান্ড আদার স্টোরিস’ (১৮৯৩), ‘দ্য ম্যান দ্যাট করাপ্টেড হাইডেলবার্গ অ্যান্ড আদার এসেইস’ (১৯০০), ‘হোয়াট ইজ ম্যান?’ (১৯০৬)।
১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের রেডিংয়ে মারা যান তিনি।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।