বাংলাদেশের ঐতিহাসিক পাঁচ মসজিদ
বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম মুসলিম জনবহুল দেশ। মধ্যযুগ থেকে অনেক মুসলিম শাসক এই স্বাধীন ভূ-খণ্ডটি শাসন করেছেন। সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে বিবর্তন হয়েছে এই জায়গাটির সভ্যতা ও সংস্কৃতি। অসংখ্য প্রাসাদ, বিশাল জলাশয়, দূর্গ, তৈরি হয়েছে। এমন কিছু মসজিদ আমাদের দেশে এখনও রয়েছে যা কিনা মুসলিম সভ্যতার প্রধান নিদর্শন। শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম উপযুক্ত স্থান মসজিদ। চলুন জেনে নেওয়া যাক, বাংলাদেশের এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন প্রাচীন মসজিদ সম্পর্কে।
পাঁচ প্রাচীন মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাগেরহাট
বাগেরহাটে অবস্থিত এই মসজিদটি নির্মাণ করেন খান জাহান আলী। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত এই মসজিদটি। দুই হাজার জনেরও বেশি মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদগুলোর মধ্যে এটি একটি। একবার যে কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে শীতল পরিবেশ পাবে, যা শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে।
বাঘা মসজিদ, রাজশাহী
রাজশাহী থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে বাঘায় অবস্থিত বাঘা মসজিদ। এটি একটি গম্বুজ আকৃতির মসজিদ। মসজিদটি ফুল, নিদর্শন এবং অন্যান্য সুন্দর জিনিসের মতো প্রচুর পোড়ামাটির শিল্পে আছ্ছাদিত। পোড়ামাটির শিল্পের বেশিরভাগই ফুলের নকশা। এই মসজিদটি ১৫২৩ সালে সুলতান নুসরাত শাহ হোসেন শাহের আমলে নির্মিত হয়েছিল।
মসজিদের ভেতরে ছয়টি স্তম্ভ রয়েছে। মসজিদের চারটি খিলানে আঁকা শিল্পকর্মগুলো সে সময়ের দুর্দান্ত নকশার পরিচয় বহন করে। বাঘা মসজিদের দেয়াল ২ দশমিক ২২ মিটার পুরু। মসজিদটিতে মোট ১০টি গম্বুজ, চারটি মিনার ও পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে ও বাইরে সর্বত্রই টেরাকোটার নকশা।
সাত গম্বুজ মসজিদ, ঢাকা
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেন গভর্নর শায়েস্তা খান। এটি ১৭ শতকে বাংলাদেশে প্রবর্তিত প্রাদেশিক মুঘল স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। এই মসজিদটির নামাজের স্থানকে আচ্ছাদিত করা হয়েছে সাতটি গম্বুজাকার মুকুটে। মাটি থেকে এর উচ্চতা ১৫ ফুট। ইট-চুনের মিশ্রণে তৈরি এ মসজিদটির দেয়ালগুলো ৬ ফুট গভীর। মসজিদটির বাইরের অংশ ঢাকা মুঘল আমলের সমস্ত স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয়। মসজিদটির নামাজের ঘরটির উপর তিনটি গম্বুজ ছাড়াও, চারটি ফাঁপা দ্বি-গম্বুজ বিশিষ্ট টাওয়ার রয়েছে, যার জন্য এর নাম সাত গম্বুজ মসজিদ হয়েছে। মসজিদের ইট-চুনের দেয়ালগুলো ৬ ফুট গভীর।
শঙ্করপাশা শাহী মসজিদ, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের প্রাচীন একটি মসজিদ হলো শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। মসজিদটি ১২০৮ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মজলিস আমিনের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যা মসজিদটির খোদাইকৃত শিলালিপি থেকে পাওয়া যায়। একতলা ভবনের চারটি গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি । এর মূল ভবনে একটি বড় গম্বুজ এবং বারান্দায় তিনটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির রয়েছে তিনটি দরজা,মাঝখানেরটি অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড়। দেয়ালগুলোর পুরুত্ব প্রায় ১০ ফুট। কালক্রমে এলাকাটি ঘন গাছপালা এবং বনভূমিতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সম্প্রতি আবারও এই মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়।
কদম মোবারক মসজিদ, চট্রগ্রাম
কদম মোবারক মসজিদ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শনের আরেকটি প্রাচীন মসজিদ। মসজিদটি সিটি করপোরেশনের জামালখান ওয়ার্ডে অবস্থিত। মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের শাসনামলে ১৭২৩ সালে স্থানীয় ফৌজদার মুহাম্মদ ইয়াসিন মসজিদটি নির্মাণ করেন। ছাদযুক্ত আয়তাকার এই মসজিদটি একটি উঁচু মঞ্চে নির্মিত।
মসজিদটিতে রয়েছে পাঁচটি দরজা। যার তিনটি সম্মুখের দেয়ালে এবং বাকি দুটি প্রতিটি কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত। মসজিদটিতে আরো রয়েছে তিনটি গম্বুজ ও দুটি খিলান। এ ছাড়াও নামাজের কক্ষে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ছাদ রয়েছে এবং প্রাঙ্গণগুলো খিলান দিয়ে আবৃত। মসজিদের অভ্যন্তরীণ দেয়ালগুলো আয়তাকার প্যানেল এবং কুলুঙ্গি দিয়ে অলঙ্কৃত। কদম মোবারক মসজিদটিতে বর্তমানে একটি আবাসিক মাদরাসা,একটি কবরস্থান এবং একটি নতুন মসজিদ ভবনসহ একটি আধুনিক মসজিদ কমপ্লেক্সে পরিণত হয়েছে।