আপিল বিভাগে নির্ধারিত হবে এক শিশুর পিতৃত্ব
২০০৩ সালে কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় এক নারীর। ১৩ বছর সংসার জীবনে তাদের দুটি সন্তান হয়। পরে পারিবারিক মনোমালিন্যের কারণে ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বামীকে তালাক দেন তিনি।
ওই নারী পেশায় একজন নার্স। ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরির সুবাদে পরিচয় হয় মো. আব্দুস সালাম নামে এক চিকিৎসকের সঙ্গে। ওই চিকিৎসক একই হাসপাতালে চাকরি করেন। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই চিকিৎসক তার কোয়ার্টারে ডাকেন এই নারীকে। পরে জুসের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে তাকে ধর্ষণ করা হয়। এরপরও বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করা হয় একাধিকবার। ধর্ষণের ফলে ওই নারী ২০১৮ সালের ১৭ জুন একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। পুত্র সন্তান জন্মের পূর্ব থেকে বারবার বিয়ের চাপ দিলেও ওই চিকিৎসক তা অস্বীকার করেন।
এ ঘটনায় ওই নারী ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্সকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয়। পিবিআইয়ের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম অনুসন্ধান শেষে ওই চিকিৎসককে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে বাদীনি ট্রাইব্যুনালে নারাজি দরখাস্ত দেন। একইসঙ্গে সন্তানের পিতৃত্ব নির্ধারণের জন্য ডিএনএ টেস্টেরও আবেদন করেন।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মাফরোজা পারভীন গত বছরের ১৫ মার্চ নারাজির আবেদন গ্রহণ করে শিশুর পিতৃত্ব নির্ধারণে আব্দুস সালামের ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন। ওই আদেশে বলা হয়, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও দাখিলী কাগজপত্র এবং নারাজির জবানবন্দি পরীক্ষান্তে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার ডিএনএ বিষয়ে উক্তরুপ বক্তব্য থাকায় মামলাটি ডিএনএ টেস্টসহ অধিকতর তদন্ত হওয়া আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়। অভিযোগকারীর নালিশী দরখাস্তের বক্তব্য ও নারাজি দরখাস্তের বিষয়ে সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় নারাজি দরখাস্ত মঞ্জুর করা হল। সেহেতু মামলাটি সিআইডি কর্তৃক আসামি ও অভিযোগকারীর ছোট সন্তানের ডিএনএ টেস্ট করা ও পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া গেল।’
ট্রাইব্যুনালের ডিএনএ টেস্টের আদেশ রিকল চেয়ে আবেদন দেন ওই নারীর প্রথম স্বামী কামাল হোসেন। ওই রিকল আবেদনে দাবি করেন যে, তৃতীয় সন্তানের পিতা সে। ডিএনএ টেস্টের আদেশ রিকল করা হোক। এই রিকল আবেদন খারিজ করে ট্রাইব্যুনালের বিচারক বলেন, কামাল হোসেন এই মামলার কোন পক্ষ নয়। তার আবেদন খারিজ করা হলো। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান তিনি। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ ডিএনএ টেস্টের আদেশ স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেন। রুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশনা সংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। শুনানি শেষে ওই রুল গ্রহণ করে গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাতিল করে দেয়। ডিএনএ টেস্টের আদেশ বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
ওই নারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দেন। আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে ডিএনএ টেস্ট করতে কোন আইনগত বাধা নাই। সিআইডি এই ডিএনএ টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে।