আবেদন ছাড়াই ৯০ লাখ টাকার ঋণ, ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে জিডি
বছরখানেক আগে একজনের অনুরোধে ব্যাংকের হিসাব খোলার জন্য নির্ধারিত ফরমে স্বাক্ষর করেছিলেন শেখ অহিদুল ইসলাম। তারপর তিনি কোনোদিন ব্যাংকে যাননি, লেনদেনও করেননি। পরে অন্য ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড করতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে দেখতে পান, তাঁর ব্যাংকে ঋণ রয়েছে ৯০ লাখ টাকা। হতবাক হয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন এ কাণ্ড ঘটিয়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া শাখা।
এ ঘটনায় এনআরবিসি ব্যাংকের গ্রাহক শেখ অহিদুল ইসলাম খুলনার দৌলতপুর থানায় শাখা ব্যবস্থাপকসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করে খুলনার দৌলতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য বিধি অনুযায়ী, অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) খুলনা কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক নাজমুল আহসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জিডিতে বলা হয়, রাজিব মোটরসের স্বত্বাধিকারী শেখ অহিদুল ইসলামের কাছে পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ী রাব্বী এন্টারপ্রাইজ আব্দুল হালিম শেখ এনআরবিসি ব্যাংকে হিসাব খোলার জন্য ব্যাংকের ফরমে স্বাক্ষর নিয়ে যান। কোনো টাকা জমা না দেওয়ায় অহিদুল ইসলামের আর বিষয়টি স্মরণে নেই। এ বছর তিনি খুলনার ব্র্যাক ব্যাংকে একটি ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে দেখা যায়, তাঁর এনআরবিসি ব্যাংকের সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া শাখায় ৯০ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে, যা গত ৬ সেপ্টেম্বর নেওয়া হয়েছে। যার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩ জানুয়ারি।
জিডিতে আরও বলা হয়, শেখ অহিদুল ইসলামের অগোচরে তাঁর ওই হিসাবে ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ৯৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা লেনদেন করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে চেকবই গ্রহণ, পে অর্ডার এমনকি ব্যাংকের সুদও পরিশোধ করা হয়েছে।
জিডিতে এনআরবিসি ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপক কাজী মোশারেফ হোসেন, ব্যবস্থাপক (অপারেশন) শাহেদ শরীফ, জুনিয়র কর্মকর্তা বদিউর রহমান, ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম শেখসহ পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এনআরবিসি ব্যাংক কলারোয়া শাখার ব্যবস্থাপক কাজী মোশারেফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঋণ জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘শেখ অহিদুল ইসলাম অভিযোগ করার পর এ টাকা সমন্বয় করে দেওয়া হয়েছে এবং গ্রাহকের কোনো অভিযোগ নেই।’
ব্যাংকে না গিয়ে কোনো আবেদন না করলেও ৯০ লাখ টাকা ঋণ কীভাবে হল, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বারবার টাকা সমন্বয় করা হয়েছে বলে দাবি করতে থাকেন এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন না করার অনুরোধ জানান। কাজী মোশারেফ হোসেন জানান, ঠিকাদারি কাজের বিপরীতে এ ঋণ দেওয়া হয়েছিল।
শেখ অহিদুল ইসলাম বলে, ‘আমি কোনোদিন ওই ব্যাংকে যাইনি। হিসাব খোলা ফরম ছাড়া কোনো কাগজে সই করিনি। কোনো লেনদেন বা চেক বইয়ের জন্য আবেদনও করিনি। সেখানে ৯০ লাখ টাকার ঋণ। এটা বড় ধরনের জাল জালিয়াতি। আর, এর সঙ্গে ব্যাংকের বড় সিন্ডিকেট চক্র জড়িত। ব্যাংকে অভিযোগ করার পর তারা টাকা সমন্বয় করে দিয়েছে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপক এখন বারবার ফোন করে ক্ষমা চাচ্ছেন এবং অভিযোগ না করার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন।’
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ এনআরবিসি’র
এনআরবিসি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, ‘এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে—আমাদের ব্যাংকের গ্রাহক শেখ অহিদুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স রাজিব মোটরস গত ৫ সেপ্টেম্বর সরকারি টেন্ডারে অংশগ্রহণের জন্য আর্নেস্ট মানি হিসেবে সর্বমোট ৯০ লাখ টাকার ৬০টি পে-অর্ডার ইস্যুর জন্য আবেদন করেন। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শাখা থেকে পাঠানো প্রস্তাব প্রধান কার্যালয় ৬ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয়। প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদনের পর গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা সিটি করপোরেশনের টেন্ডারে অংশ নেওয়ার জন্য ৬ ও ২২ সেপ্টেম্বর এবং ৩ অক্টোবর মোট ৫৭ লাখ ১১ হাজার ৯৫০ টাকার ৩৩টি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়। পে-অর্ডারগুলো ইস্যুর জন্য ৫ শতাংশ হারে ক্যাশ মার্জিন জমা দেন গ্রাহক। অতপর টেন্ডারে কাজ না পাওয়ায় ২৭ সেপ্টেম্বর এবং ২৮ ও ৩১ অক্টোবর পে-অর্ডারগুলো ফেরত দেয় খুলনা সিটি করপোরেশন এবং ওই অর্থ গ্রাহকের হিসাবে জমা দিয়ে পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিনিয়োজিত অর্থ সমন্বয় করা হয়েছে। সুদসহ মোট ৫৭ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৭ টাকা সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ ওই হিসাবে কোনো অনাদায়ী দেনা নেই। উল্লেখিত লেনদেনগুলো ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিয়মনীতি মেনে সংগঠিত হয়। এখানে নগদ অর্থের কোনো লেনদেন হয়নি। সরকারি কাজে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া সাধারণ পদ্ধতিতে ব্যাংক গ্রাহকের অনুকূলে মেয়র, খুলনা সিটি করপোরেশনের নামে পে-অর্ডারগুলো ইস্যু করা হয় এবং স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যাংকে ফেরত এসে সমন্বয় হয়েছে।’