এক জহিরের সাজা আরেক জহিরের ঘাড়ে, অবশেষে যেভাবে মুক্তি
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির। ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেসবুকে নিজের ব্যক্তিগত ওয়ালে লিখে যাচ্ছেন নিরপরাধ ব্যক্তিদের কীভাবে অপরাধের সঙ্গে জড়ানো হলো। তৃতীয় পর্বে লিখেছেন, নামের মিল থাকায় জেল থেকে বেরোনো এক আসামির পরিবর্তে কীভাবে অপর আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে কীভাবে মামলায় জড়ানো হলো, পরিশেষে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে কারাগার থেকে কীভাবে মুক্তি মিলল—পড়ুন আইনজীবী শিশির মনিরের বর্ণনায় :
১। বছর দুই আগের কথা। সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের ৩৫২ (পুরাতন) নম্বর রুমে বসে গল্প করছি। দুপুর ২টার দিকে হোয়াটসঅ্যাপে রিং বেজে উঠল। নম্বরটি চিনতে পারিনি। দু-তিন বার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কে?’ নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, ‘শিশির ভাই! আমি জহির।’ তখনও মনে করতে পারিনি। ‘সরি ভাই, চিনতে পারছি না।’ তিনি কিছুটা থমকে গিয়ে আবারও পরিচয় দিলেন। আমি সাথে সাথে বললাম, ‘জহির ভাই!! কেমন আছেন? সরি, আপনার কণ্ঠ চিনতে পারি নাই। কী করছেন? কোথায় আছেন? চিনতে না পারার কারণে মাফ করে দিয়েন ভাই।’ তিনি ছাত্রজীবন থেকেই অতিপরিচিত। এখন একটি স্বনামধন্য মাদ্রাসার ভাইস-প্রিন্সিপাল।
২। কুশলাদি বিনিময় হওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই! কী ভেবে স্মরণ করলেন?’ বললেন, সাক্ষাতে কথা বলতে চান। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘বিষয় কী?’ উত্তরে বললেন, ‘আইনি বিষয়। জরুরি দেখা করা দরকার। পারলে আজকেই দেখা করা দরকার।’ বুঝলাম ফোনে তিনি সব বলতে চাচ্ছেন না। বললাম, ‘কাল দুপুরে কোর্টে আসুন।’ বললেন, ‘ঠিক আছে ভাই।’ শুধু বললাম, ‘কাগজপত্র কিছু থাকলে নিয়ে আসবেন।’ ফোন রেখে আমি আমার কাজে লেগে গেলাম।
৩। পরের দিন জোহরের নামাজ পড়ে খেতে বসলাম। অমনি দেখি জহির ভাই। দাঁড়িয়ে মুসাফা করলাম। চেহারা আগের মতোই আছে। কোনো পরিবর্তন নাই। কণ্ঠও একই রকম। স্বাস্থ্য একটু পরিবর্তন হয়েছে। খুবই বিনয়ী ভদ্রলোক। কুরআনে হাফেজ। তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করলাম। দুপুরে খেয়েছেন কি না জিজ্ঞাসা করলাম? কিছুটা লজ্জা পেলেন। বুঝলাম, এখনও খাওয়া হয়নি। এদিকে, আমার কোর্টে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বললাম, ‘আমার সাথে চলেন। আর, যেতে যেতে আপনার সমস্যাটা শুনি।’ বললেন, ‘জি।’
৪। পুরাতন ভবন থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী হয়েছে?’ বললেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তার করার জন্য বাড়িতে পুলিশ গেছে। আমার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হয়েছে। আমি নাকি পলাতক আসামি! আমার গ্রামের বাড়িতে তন্ন তন্ন করে খুঁজতেছে। আমি তো ঢাকায় থাকি। বাড়িতে সবাই ভয় পেয়ে গেছে। অথচ আমি কোনোদিন মামলার আসামি ছিলাম না। আমি জীবনেও জেলে যাইনি। আমার নামে কোনো মামলা আগেও ছিল না, এখনও নাই। বিষয়টি নিয়ে আমি ঢাকা কোর্টের আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তাঁরা আমাকে surrender করার পরামর্শ দিয়েছেন। জামিন নেওয়ার জন্য বলতেছেন। আমি তো আসামি নই। আমি কেন surrender করব? আমি কেন জামিন নিতে যাব? আমার এখন কী করণীয়? পরামর্শ দিন।’
৫। বিষয়টি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তাহলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গেল কেন? আপনার নামে গেছে? আপনি কি মামলার কাগজ দেখেছেন? আইনজীবী কি আপনাকে কাগজ দিয়েছে? বা মামলার নম্বর জানেন? পরোয়ানার কাগজ দেখেছেন আপনি?’ বলতেই মোবাইল খুলে ছবি দেখালেন। বললাম, ‘আমার মোবাইলে ফরওয়ার্ড করে দিন।’ বলতে বলতে কোর্টে ঢুকলাম। তিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রায় ২০ মিনিট পর মামলা শেষ করে বের হয়ে এলাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে আবার আলোচনা শুরু হলো। বললাম, ‘আর কিছু বলবেন?’ বললেন, ‘না।’ পরক্ষণেই বললেন, ‘আরেকজন আমার নাম ব্যবহার করে জামিন নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। এখন হাজিরা না দেওয়ার কারণে তার জামিন বাতিল হয়ে গেছে। ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। সেই ওয়ারেন্ট আমার বাড়ি গিয়ে হাজির হয়েছে।’ এই তথ্যটি খুবই মূল্যবান। বললাম, ‘আমাকে কাগজ দেখাতে পারবেন?’ বললেন, ‘জি, পারব।’ বললাম, ‘লিখুন কী কী কাগজ লাগবে। মামলার এফআইআর, এজাহার, পুলিশ ফরওয়ার্ডিং, আদেশনামা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, জামিননামা, ওকালাতনামা, জেল কর্তৃপক্ষের রেকর্ড ইত্যাদি।’ বললেন, ‘আমি দ্রুত ব্যবস্থা করছি।’ এ কথা বলে চলে গেলেন। বেশ কয়েকদিন যোগাযোগ নেই। হঠাৎ একদিন মেসেজ দিলেন দেখা করতে চান। কাগজপত্র নিয়ে ধানমণ্ডির চেম্বারে বিকেলে আসতে বললাম। যথারীতি আসরের সময় আরেকজনসহ হাজির হলেন।
৬। বিষয়টি বেশ innovative বিধায় আমার প্রথম জুনিয়র সাদ্দামকে বসতে বললাম। সে উপস্থিতবুদ্ধি দিতে পারে। জহির ভাই বললেন, ‘জেল কর্তৃপক্ষের রেকর্ড তো পাই নাই। আমাকে দেবে না। এখন কী করি?’ বললাম, ‘সেটা আমরা দেখব। বাকিগুলো দিন। ওখানে বসেই ভাবতে লাগলাম, কোথায় পাব জেলের রেকর্ড? কে দেবে? আইনের কোন বিধানবলে পাওয়া যাবে? হঠাৎ সাদ্দাম বলল, ‘তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আমরা দরখাস্ত লিখতে পারি। এ আইনে তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। বললাম, ‘আইনটি নিয়ে এসো।’ পড়লাম। দেখলাম এই আইনে দরখাস্ত করার বিধান আছে। ‘আজই দরখাস্ত করে ফেল।’ এই কথা বলে জহির ভাইকে বিদায় দিলাম। ‘এখন যান, আপনাকে পরে জানাব।’ পরের দিন একজন আইনজীবীর মাধ্যমে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে দরখাস্ত পাঠালাম। রিসিপ্ট কপি সাথে নিয়ে এলো। এরই মধ্যে ঢাকা কোর্টের আইনজীবী জনাব মুজাহিদুল ইসলামের মাধ্যমে জেল প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে প্রাথমিক পজিটিভ তথ্য পাওয়া গেল। কিছুটা চিন্তামুক্ত হলাম।
৭। জেল কর্তৃপক্ষ আমাকে ফোন করল। এ ধরনের দরখাস্ত কেউ দেয় না। তারা কিছুটা অবাক হয়েছে। বললাম, ‘আমাকে এই মামলার রেকর্ডের সত্যায়িত কপি দিন।’ জিজ্ঞাসা করে, ‘এটা দিয়ে আমি কী করব?’ বললাম, ‘আইনি কাজে লাগাব।’ জবাবে বললেন, ‘আমাদের কোনো সমস্যা হবে না তো?’ বললাম, ‘না। আপনাদের সমস্যা হবে কেন? আমিই বা আপনাদের সমস্যা করব কেন?’ ইত্যাদি অনেক কথা। বুঝতে পারলাম সহজে পাওয়া যাবে না। সাদ্দামের বন্ধু মিজানের পরিচিত এক ভদ্রলোক জেল প্রশাসনে কাজ করেন। তাঁর মাধ্যমে সাদ্দাম কথা বলল। তিনি বিষয়টি বুঝতে পারলেন। আমাদের সাহায্য করলেন। সত্যায়িত একটি ফটোকপি হাতে হাতে দিলেন। ওই কপি দেখে আমরা আনন্দে নেচে উঠলাম। দেখা যায়, জহির নামে যিনি জেলে ছিলেন, তাঁর ছবির সাথে জহির ভাইয়ের ছবির কোনো মিল নাই। সে অন্য আরেকজন। এমনকি আঙ্গুলের ছাপেরও মিল নাই। ওই ব্যক্তির মুখে দাড়িও নাই। বয়সও কম। কিন্তু, একই এলাকায় বাড়ি। সেই মূলত এই সমস্যার মূল। জহির ভাইকে জানালাম। ‘আমরা তথ্য পেয়েছি। ইনশাআল্লাহ একটা ব্যবস্থা হবে। দোয়া করেন।’ ভদ্রলোক কিছুটা স্বস্তিবোধ করলেন।
৮। তথ্য হাতে পেলাম। এই তথ্য আইনের কোন বিধান অনুযায়ী কাজে লাগবে? এটাই গবেষণার বিষয়। কারণ, তাঁর নামে ওয়ারেন্ট হয়ে গেছে। পলাতক আসামি তো আইনের আশ্রয় নিতে পারে না। শত বছরের পুরানো নীতি, A fugitive cannot take shelter under any provision of law. Either he has to go to jail or obtain bail.’ যদি আইনের সুবিধা পেতে হয়, তাহলে তাকে আইনের কাছে Surrender করতে হবে। সারাজীবন এই কথাই শিখেছি। তাহলে কি জহির ভাইকে জেলে যেতে হবে? আর কোনো উপায় নেই? তিনি তো আসামি নন! তিনি তো প্রতারণার শিকার! নিশ্চয়ই একটা না একটা পথ আছে। হয়তো আমরা জানি না। এখানেই ল’ল্যাব-এর কারুকাজ শুরু। নামের স্বার্থকতা প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ।
৯। আমার জুনিয়র বন্ধুদের ডেকে কাজ দিলাম। বিশেষ করে সাদ্দাম, সামি ও সাকিব। তারা খুঁজতে লাগল। DLR, BLC, ADC, ALR, মানুপাত্র ইত্যাদি। কাছাকাছি কয়েকটি নজির পাওয়া যায়। কিন্তু to the point পাওয়া যায় না। আবার খুঁজতে লাগল। এ যেন সাগরে বিপাশার পানির মতো। অন্ধকারে কালো বিড়াল খোঁজার মতো ঘটনা। তবুও হাল ছাড়া যাবে না। খুঁজতে খুঁজতে বিরক্তি এসে যায়। তবুও লেগে থাকতে হয়। অবশেষে একটি নজির পাওয়া গেল। সেই মামলায় সাজা হয়ে গিয়েছিল। Surender না করে সরাসরি রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছিল। হাইকোর্ট পজিটিভ রায় দিয়েছিলেন।
১০। সাদ্দামকে বললাম, ‘তুমি মামলাটি draft করো। অতীতের নজির থেকে ভাষা ব্যবহার করতে হবে। যেন আদালতকে বলা যায়, আমরা ওই নজির থেকে ভাষা ব্যবহার করেছি। আমাদের উচ্চআদালতের ভাষা। এই ভাষা ignore করার সুযোগ নাই। সে তাই করল। খুব সুন্দর draft হয়েছে। জহির ভাইকে ডেকে সব বলা হলো। রিট আবেদন দায়ের করা হলো challenging the warrant of arrest and direction to hold an inquiry to ascertain the real perpetrator.
১১। যথারীতি মামলাটি কার্যতালিকায় এলো। শুনানির জন্য আমরা রিসার্চ Bundle তৈরি করলাম। মোট চারটি নজির দিয়ে এই bundle; দুই কপি জজ সাহেবদের জন্য, আরেক কপি সরকারপক্ষের জন্য। আইটেম ছিল ১০৯ নম্বর। ১০০ পার হওয়ার পর নিজেকে বেশ নার্ভাস মনে হচ্ছিল। কী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে? কী উত্তর দেব? সঠিক করে বোঝাতে পারব কি না? আমার উপস্থাপনের দুর্বলতার কারণে জহির ভাই ক্ষতিগ্রস্ত হন কি না? আমার ওপর অর্পিত আমানত। আমি কি পারব তাঁকে জেল থেকে বাঁচাতে? নানান প্রশ্ন মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আগে এ রকম খুব কমই হয়েছে। আইটেম ডাকল। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, ‘My Lords, this is a different type of writ petition. Completely unusual but a fit case to interfere in writ jurisdiction. Admittedly, a fugitive cannot take shelter of law. Your Lordship passed a judgment in the case of Sarwar Alam. Moreover, there are plethoras of decisions of our apex court that a fugitive cannot get any remedy under the law. Either he has to go to jail or obtain bail. Another very important question of law involved whether this petitioner can avail writ jurisdiction or not? If not, can he avail inherent jurisdiction under section 561A of the Code of Criminal Procedure without going to jail? These two important questions need to be answered in the line of previous decisions of our apex court.’
এই introduction-এর পর আমি তিনটি সুনির্দিষ্ট submission রাখলাম।
এক. রিট petition is maintainable even he is fugitive in the eye of law.
দুই. Quashment under section 561A is not appropriate petition because in that case he will be treated as accused.
তিন. Warrant of arrest should be stayed and an inquiry committee should be formed.
রিট চলবে কি না?
এক. Writ Petition is maintainable (রিট মোকাদ্দমা চলবে) আপাত অর্থে মনে হতে পারে—ফৌজদারি বিষয়ে রিট কীভাবে চলবে? তা ছাড়া পলাতক আসামি কীভাবে রিট দায়ের করবে? এই মামলার প্রেক্ষপট পুরোই ভিন্ন। ‘আমি তো fugitive নই। আমি জীবনে কোনোদিন জেলে যাইনি। দেখুন জেলের রেকর্ড। এই লোক তো আমি নই। জেলের সকল রেকর্ড কল করলেই গুমর ফাঁস হয়ে যাবে। এই ছবি কার? এই ছাপ কার? আমি কেন পলাতক আসামির কাতারে পড়ব? আমি কেন নিজ কপালে কলঙ্ক লেপন করব? এই মামলার কাগজ দেখুন। খিলগাঁওয়ের ঘটনা। অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে মামলা হয়েছে। তারপর পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান করেছে। তাদের একজন আমার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে জেল খেটেছে। তারা পরে হাজিরা না দিয়ে বিদেশ চলে গেছে। আমি কেন আসামি হব?’ এই কথা বলে research bundle থেকে নজিরগুলো উপস্থাপন করলাম। একটি নজিরের line by line পড়ে শোনালাম। সবকিছু দেখে জজ সাহেবেরা স্তব্ধ হয়ে গেলেন। সবাই খুব নীরব হয়ে গেল। আমার ভয় কিছুটা কমল।
Quashment হবে কি না?
দুই. সকলেই surrender করার কথা বলে। আমি তো surrender করব না। এক নামে কি দুই ব্যক্তি জেল খাটবে? এটা কী করে সম্ভব? আমি যদি আসামি না হই, তাহলে quash করব কি? আদালতই বা কী সিদ্ধান্ত নেবেন? কিভাবে নেবেন? আমার মতে, এখানে 561A petition is not maintainable at all.
Stay warrant of arrest
তিন. ‘Your Lordship, please see my prayer. I want an independent inquiry and in the meantime stay the operation of the order issuing warrant of arrest.’
১২। আমাকে শোনার পর (আদালত) সরকারপক্ষকে বলতে বললেন। সরকারপক্ষ দাঁড়িয়ে একটি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে দিল। সবাই গুপ্ত হাসি হাসল। জজসাহেব বললেন, ‘আপনার friend কী বলছেন, আর আপনি কী বলছেন? এটা কোনো কথা হলো!’ তারপর তিনি থামলেন। জজসাহেব বললেন, ‘tomorrow for Order.’
১৩। পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টায় কোর্টে হাজির হলাম। আইটেম নম্বর ৫। ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে আইটেম ডাকল। আমি বেশ চিন্তিত ছিলাম। ডেকেই আদেশ দিলেন, ‘Yes. Rule as to why the warrant of arrest shall not be declared without lawful authority and is of no legal effect. Pending hearing of the Rule, stay operation of the Order issuing warrant of arrest and Police Bureau of Investigation is directed to conduct an investigation ascertaining the real perpetrator within 60 days and submit a report before this Court.’ আমি দাঁড়িয়ে ‘much obliged’ বলে চলে এলাম। সাদ্দাম জহির ভাইকে জানাল। তিনি খুশিতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লেন।
১৪। আদেশ সাইন হলো। নোটিশ জারি হলো। পুলিশের তৎপরতা বন্ধ হলো। PBI-এর অফিসে জহির ভাইকে ডাকা হলো। তিনি যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। সাদ্দামকে সাথে যেতে বললাম। জহির ভাইকে দেখেই তারা মন্তব্য করল, ‘আপনি তো এই লোক না।’ ভালো ব্যবহার করল। সাদ্দামের সাথেও অনেক আলোচনা করল। প্রকৃত লোক চিহ্নিত হলো। সে জামিন নিয়ে বিদেশে চলে গেছে। PBI আদালতে এই রিপোর্ট দায়ের করল। শুনানি হলো। সরকারপক্ষ কোনো জবাব দিতে পারল না। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে জহির ভাইকে মামলা থেকে রিলিজ দিলেন। আমি একটি নিবেদন করলাম, ‘My Lords, জানি না আরও কত লোক এভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। একটি কাজ করলে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।’ জজসাহেব বললেন, ‘কী চান বলুন?’ বললাম, ‘সারা দেশের আদালত, থানা ও জেলে Biometric System introduce করার নিদের্শনা চাই।’ আদালত খুশি হয়ে এই নির্দেশনা দিলেন। শুনেছি, কাজ শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। জহির ভাই দেখা করতে এলেন। কোলাকুলি করলেন। মুচকি হাসলেন। সব পরিশ্রম সন্তুষ্টিতে ভরে গেল। আলহামদুলিল্লাহ।