খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারের : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে এর সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।
আজ রোববার দুপুরে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন বিএনপির মহাসচিব। গতকাল শনিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর বিষয়ে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সরকার আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘হ্যাঁ, এই কথাটা আমরা এর আগেও বলেছি। আমাদের আইনজীবীরাও এর উত্তর দিয়েছেন। সরকার যে আইনের ক্ষমতাবলে এই নির্দেশ (খালেদা জিয়া সাজা স্থগিত করে মুক্তি) দিয়েছেন, সেই আইনে তারা নতুন নির্দেশে দিয়ে তার (খালেদা জিয়া) বিদেশের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। আপনি সঠিক বলেছেন। তারা আসলে নিজেরাই নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করছেন। এটার একমাত্র উদ্দেশ্য খালেদা জিয়ার সঙ্গে একটা বৈরি মনোভাব প্রর্দশন করা। প্রতিহিংসামূলকভাবে তারা (সরকার) এই ব্যবস্থা করছে।’
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তার নিন্দা জানানো হয়েছে বলেও জানান মির্জা ফখরুল। তিনি আরও বলেন, ‘আইনের কোথাও এ কথা বলা নেই যে, সরকার তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিতে পারবেন না। যেখানে খুনের মামলায়, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত আসামি অথবা আজীবন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্তি নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পারে, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া যাবে না, এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
সংসদে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল সংসদে সংসদনেতা হিসেবে শেখ হাসিনার বক্তব্য অনভিপ্রেত এবং রাজনৈতিক শালীনতা বিবর্জিত। তাঁর মনগড়া কল্পকাহিনীর মধ্যে দিয়ে একজন মহান মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন।’
করোনা মোকাবেলায় প্রায় ১৫ মাস সময় নিয়েও সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির শীর্ষ এ নেতা। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং করোনা চিকিৎসা ও টিকা কমিটির আহ্বায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আগামী ৫ জুলাই বিস্তারিত বক্তব্য দেবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় সভায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিএনপি বারবার সতর্ক করবার পরও সরকার সংক্রমণ প্রতিরোধের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারার জন্য সরকারের উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও দুর্নীতিকে দায়ী করা হচ্ছে। জেলা সদরে অক্সিজেনের অভাব, হাই-ফ্লো নাজাল ক্যানোলার তীব্র সংকট, শতকরা ৫২ ভাগ জেলা হাসপাতালে কোনো আইসিইউ বেড না থাকা, ওষুধের অপ্রতুলতা ঢাকার বাইরের জনগণের জীবন মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।’
সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নৈরাজ্য ও দুর্নীতি, অন্যদিকে করোনা টিকার দুষ্প্রাপ্যতা কোটি কোটি মানুষের জীবন অনিশ্চিত করেছে। সভা মনে করে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতার জন্য সরকারের উদাসীনতা দায়ী। প্রায় ১৫ মাস সময় নিয়েও সমস্যাগুলো সমাধান করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।’