‘জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে যেকোনো সময়’
‘জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে যেকোনো সময়’—এমনটা মনে করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী শাসন পুরোনো বাকশালেরই পুনঃমুদ্রণ। নব্যবাকশালি আওয়ামী শাসন যন্ত্রের কাছে এ দেশের সংগ্রামী জনগণ কখনও মাথা নত করবে না। জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে যেকোনো সময়। বর্তমান বিপন্ন সময়ে দাঁড়িয়ে জনগণ তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। জনগণ এ অপশক্তির কাছে কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না।’
নয়াপল্টনে আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী আরও বলেন, ‘যশোর জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধ্বনিকে ঈদের দ্বিতীয় দিনে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে তাঁর বাড়ির সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ঘটনার সময় বদিউজ্জামান ধ্বনি নিজের বাড়ির সামনে একটি দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসী তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া গতকাল কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলাধীন কালীগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলামকে মধ্যযুগীয় কায়দায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে।’
‘এসব হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, এক বৃহত্তর মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। মানুষ যাতে সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করার সাহস না পায়, এ হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে সে মরণবার্তা দেওয়া হলো’, যোগ করেন রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, ‘মূলত, পায়ের নিচ থেকে শেখ হাসিনা সরকারের মাটি সরে যাওয়া টের পেয়ে আওয়ামী সরকার দেশে এখন মৃত্যুদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বজন পোষণ এবং বিলাসী জীবনযাপন এবং বিপুল সম্পত্তি অর্জন সংকটাপন্ন হবে ভেবেই ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে তারা এখন মরণ কামড় দিচ্ছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা উন্মাদ হয়ে গেছে। তাই, সহিংস রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই—প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হবে বাংলাদেশের মাটিতে। সময় আর বেশি নাই। এ সরকারের পতন আসন্ন।’
রিজভী আরও বলেন, ‘গত ১৪ বছরে সারা দেশে হাজার-হাজার নেতাকর্মী হত্যা ও নির্যাতনের শিকার। গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েক হাজার নেতাকর্মী। দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে। বিএনপির মৃত নেতা, পবিত্র হজ পালনরত নেতা, পক্ষাঘাতগ্রস্ত নেতার নামেও তারা মামলা দিয়ে জনগণের কাছে হাসির পাত্র হয়েছে। তারা নিজেরাই প্রমাণ করল যে, মিথ্যা মামলা দেয়। গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যা প্রত্যেকটির সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত।’
এ রিজভী বলেন, ‘এ সরকারের আমলে ৪৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সাগর-রুনির হত্যার বিচার আজও হয়নি। স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণেই বেছে বেছে সাংবাদিকদেরকে হত্যা করা হয়েছে এবং বন্দি করা হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের কষ্টিপাথর মনে করা হয়। অথচ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শত্রুবলে মনে করে সরকার। এ কারণেই আজ স্বাধীন বিবেকের ওপর অবৈধ সরকারের ক্রমাগত সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত রয়েছে।’
এ সময় রিজভী আরও বলেন, ‘যশোরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধ্বনি এবং কুড়িগ্রামে যুবদল নেতা মো. শফিকুর রহমান হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এ ছাড়া চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে উপজেলা বিএনপিনেতা শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী। এবং ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চুর বাড়িতে হামলারও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপির এ মুখপাত্র।