জবি শিক্ষক রাজীব মীরের পাওনা পরিশোধ করার নির্দেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রয়াত মীর মোশারেফ হোসেনকে (রাজীব মীর) বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে রাজীব মীরের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সব পাওনা বেতন-ভাতাদি অবিলম্বে পরিশোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর স্ত্রী ও সন্তানকে এ অর্থ দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে প্রয়াত রাজীব মীরের স্ত্রী সুমনা খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. নাসিম ইসলাম রাজু।
ডেপুটি ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান হাইকোর্টের রায়ের বিষয়টি আজ শুক্রবার সকালে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বছরের ২৪ নভেম্বর জবি’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব মীরকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শুরু হয়।
রাজীব মীরের স্ত্রী সুমনা খানকে রিটে পক্ষভুক্ত করে বুধবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চে রুল শুনানি শুরু হয়।
ওই দিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু বলেছিলেন, ‘অধ্যাপক মীর মোশারেফ হোসেন (রাজীব মীর) মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর তাঁর স্ত্রী সুমনা খান রিটে পক্ষভুক্ত হন।’
ড. শাহদীন মালিক বলেছিলেন, ‘রুল শুনানি শেষে হাইকোর্ট যদি রাজীব মীরকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন, রুলটি অ্যাবসোলুট (যথাযথ) করেন, সেক্ষেত্রে স্ত্রী হিসেবে সুমনা খান ও তাঁর সন্তান স্বামীর চাকরির সব আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া প্রয়াত শিক্ষক রাজীবের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হলে তাঁর পরিবারের জন্য এটি সন্তুষ্টির কারণ হবে।’
২০১৮ সালের ৩০ জুন জবি’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব মীরকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে ওই শিক্ষককে কেন জ্যেষ্ঠতা ও বকেয়া সব বেতনাদি সুবিধাসহ স্বপদে পুনর্বহাল করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন অধ্যাপক রাজীব মীর।
রিটে বলা হয়, অধ্যাপক মীর মোশারেফ হোসেনের (রাজীব মীর) বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টের কোনো কপি তাঁকে সরবরাহ করা হয়নি। এর ফলে তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সাক্ষ্য প্রমাণ সম্পর্কে তাঁকে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত না করেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যা বেআইনি ও অবৈধ।
একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে জবি’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রাজীব মীরকে ২০১৭ সালের ১০ জুলাই স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় তাঁর বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চেন্নাইয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাজীব মীর মারা যান।