তিস্তার পানি বিপৎসীমার উপরে, রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
গজলডোবার গেট খুলে দেওয়ায় উজানের ঢল এবং ভারী বর্ষণে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তার পানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরইমধ্যে দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়া পানির ধকলে ধুকছে মানুষ।
রংপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব আজ সোমবার জানিয়েছেন, বাংলাদেশের লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টের উজানে ভারি বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঢলে ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানি আজ বিকেল তিনটায় ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তার পানি কখনও বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই, কখনও উপরে অবস্থান করছে। গত একসপ্তাহের মধ্যে আজ পানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
আহসান হাবীব আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে। তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের সবাইকে নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে নদীপাড়ের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়ায় নীলফামারীর ডিমলার ছাতনাই এলাকা থেকে জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারি এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ পর্যন্ত অববাহিকার ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল রোববার দুপুরে কমলেও আজ সকাল থেকে কোথাও কোমর, কোথাও হাঁটু পানি। এসব এলাকার উঠতি বাদাম, আমনের চারা, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে এখন পানির স্রোত। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে পানির তোড়ে। দুর্গত এলাকায় মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছে। কোথাও কোনো সহযোগিতা পৌঁছেনি বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্টটা চরমে। গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে গেরস্তরা। উঁচু স্থান এবং আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে মানুষজন অতি কষ্টে দিন পার করছে।
লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি জানান, মাত্র একদিনের ব্যবধানে পানি বিপৎসীমার অনেক ওপরে ওঠায় পাউবোর নির্দেশক্রমে নদী তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করছি। মাত্র একদিন পানি কমে যাওয়ায় অনেক মানুষ বাড়িঘরে ফিরেছিল। তারা আবারও ঘরছাড়া।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাউবো বাংলাছাড়া, মহিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আপৎকালীন বালুভর্তি জিও ব্যাগ রেখে দিয়েছে। সম্ভাব্য ভাঙন ঠেকাতে এসব জিও ব্যাগ আগাম মজুদ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিনবিনিয়ায় দুটি স্থানীয়দের দেওয়া বাঁধ আটকাতে পাউবো বাঁশের স্পার ও জিও টিউব ব্যাগ ফেলছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখতে পাউবোর পশ্চিমাঞ্চলীয় অতিরিক্ত মহাপরিচালক জ্যোতিপ্রসাদ ঘোষ তিস্তার বাম তীরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত জিও ব্যাগ মজুদ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।