দণ্ডিত ইউসুফ গাজী নির্বাচন করতে পারবে না : হাইকোর্ট
চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দণ্ডিত ইউসুফ গাজী নির্বাচন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির পর তার নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়ে করা রিট কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত ১০ সেপ্টেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সেই তালিকায় চাঁদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলটির প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পান ইউসুফ গাজী। যিনি ইতোপূর্বে চাঁদপুর পৌরসভা ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিও।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। দণ্ডিত হওয়ায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর ইউসুফ গাজীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে। গত ২২ সেপ্টেম্বর তা খারিজ করে দেওয়া হয়। এই খারিজের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেছেন। রিটে তিনি দাবি করেন যে, দণ্ডিত হওয়ার বিষয়টি জানতেন না তিনি। ১৭ অক্টোবর চাঁদপুর জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সাইফ হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি ২০০৪ সালের ৮ জানুয়ারি খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণার মামলা করেন। ওই মামলায় ইউসুফ গাজীকে আসামি করা হয়। ২০০৮ সালের ২৫ মে মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে বাদী দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন।
২০১১ সালের ৫ অক্টোবর আদালত আপিল মঞ্জুর করে আসামিকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়। ইউসুফ গাজী দাবি করেছেন, এই সাজার রায় সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত নন। তার বিরুদ্ধে কোন নোটিশ বা সমন জারি করা হয়নি। তার অনুপস্থিতিতেই বিচার করা হয়েছে। যা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
তবে ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি পুলিশ তার বাসভবনে অভিযান চালায়। তখন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। এরপরই সাজার রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। ওই বছরই বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চ সাজার রায় স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেন। পরে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দফায় দফায় ওই স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৪ সালে ‘নো-অর্ডার’ দেয় চেম্বার আদালত। এরপরই সাজা বাতিল প্রশ্নে জারিকৃত রুল ২০১৭ সালে খারিজ করে দেয় বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ। ওই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তা প্রত্যাহার করে নেন।
চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তার বাসায় আবারও অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এরপরই তিনি সাজার বিষয়ে জানতে পারেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর খুলনার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে তাকে কারাগারে পাঠায়। পরে আপিল করে হাইকোর্টে জামিন চান। গত ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুরের পাশাপাশি রুল জারি করে। এখন ওই রুল হাইকোর্টে বিচারাধীন।
ইউসুফ গাজীর কৌঁসুলি গাজী এইচএম তামিম বলেন, জামিন পাওয়া ও রুল জারির পর সাজাটা সাসপেন্ড রয়েছে। এ ছাড়া আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে অযোগ্য ঘোষণার সুযোগ নাই। দণ্ডবিধির ৪২০ ধারার অপরাধ ‘নৈতিক স্খলনজনিত’ অপরাধ নয়, এ বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত রয়েছে আদালতের।