দুর্ঘটনা কেড়ে নিল অন্তঃসত্ত্বা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পূজার প্রাণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে পূজা ছিলেন সবসময় প্রাণোচ্ছল একজন মানুষ। তাঁর ২৯ বছরের জীবনে বড় একটা অংশজুড়েই ছিল সাভার। যে সাভার তাঁকে উচ্চশিক্ষায় অনেকের মধ্যে অনন্য করে গড়ে তুলেছিল উদারভাবে, সেই সাভারেই নির্দয়ভাবে কেড়ে নিল তাঁর প্রাণ।
কাকতালীয়ভাবে পূজা সরকারের শিক্ষাজীবন ও কর্মক্ষেত্র, দুটোর ঠিকানাই ছিল রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। রাজধানী ঢাকা থেকে কর্মস্থল সাভারের আশুলিয়ার গণকবাড়িতে যাওয়ার পথে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বলিয়ারপুরে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অপর দুই সহকর্মীর সঙ্গে প্রাণ যায় তার।
নিহতরা হচ্ছেন—বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আরিফুজ্জামান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পূজা সরকার, প্রকৌশলী কাউসার আহমেদ রাব্বী ও গাড়িচালক রাজীব।
পূজা সরকার ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। স্বপ্ন ছিল আর কদিন বাদেই সন্তান প্রসবের জন্য প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে যাওয়ার। কিন্তু, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে চিরদিনের ছুটিতে।
সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর অকাল মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ স্বামী তন্ময় মজুমদার। তিনি পেশায় চিকিৎসক। তাঁর কর্মস্থল মানিকগঞ্জের কর্নেল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। থাকতেন রাজধানীর টিকাটুলিতে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পূজা সরকার শিক্ষাজীবন শেষ করে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন বেশ কিছুদিন। তারপর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রনিক্স বিভাগে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান হতাহতদের দেখতে যান এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এক প্রকৌশলীর মরদেহ দেখে নিজেও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
‘আমি কী বলব, সত্যিই আমার কোনো কিছু বলার ভাষা নেই। বিমর্ষ মা ও মেয়ে’ এতটুকুই মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
পূজা সরকারের বাবা অমল চন্দ্র সরকার ময়নাতদন্ত ছাড়াই মেয়ের মরদেহ গ্রহণ করে যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন তিনিও ছিলেন বাকরুদ্ধ। কিন্তু, তাঁর ছলছল দুই নয়নে জলোচ্ছ্বাসের মতো বইছিল অশ্রু।
পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাদের অনেকেই অমল চন্দ্র সরকারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সান্ত্বনা দিতে। কিন্তু, কী বলে সান্ত্বনা দেবে, সেটাই জানা ছিল না কারও।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. আজিজুল হক জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় তিন কর্মকর্তাকে। এঁদের মধ্যে নিহত পূজা সরকার যেমন ছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা, আবার নিহত প্রকৌশলী কাউসার আহমেদ রাব্বীর স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই—বলেন ড. আজিজুল হক।