নতুন সাজে পুলিশ, কাজ করবে দ্রুত
পুলিশের হাতে কিংবা কাঁধে রাইফেল দেখে অভ্যস্ত সবাই। কিন্তু রাইফেলটি ভারি হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে এটি বহনে ঝামেলা পোহাতে হয় পুলিশ সদস্যদের। এখন থেকে পুলিশ সদস্যরা বড় অস্ত্রের পরিবর্তে ছোট অস্ত্র ব্যবহার করবে।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশ পুলিশে সংযোজন করা হচ্ছে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট। ছয় চেম্বারের আধুনিক এই ট্যাকটিক্যাল বেল্টে গোঁজা থাকবে হোলেস্টার উইথ আর্মস, ওয়্যারলেস, হ্যান্ডকাফ, এক্সপেন্ডেবেল ব্যাটন, পানির পট ও টর্চ লাইট। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের হাত থাকবে সম্পূর্ণ খালি।
আগামীকাল অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর থেকে ট্যাকটিক্যাল বেল্টযুক্ত সর্বাধুনিক অপারেশন গিয়ার ব্যবহার করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সদস্যরা। এর ফলে বড় অস্ত্রের পরিবর্তে ছোট অস্ত্র দেখা যাবে পুলিশ সদস্যদের কাছে। পর্যায়ক্রমে এটি সারা দেশে চালু করবে বাংলাদেশ পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুলিশে সর্বাধুনিক অপারেশন গিয়ার প্রচলন ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ এসব তথ্য জানান।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ট্যাকটিক্যাল বেল্টের কারণে বিপদগ্রস্ত মানুষের যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারবে পুলিশ। আবার অপরাধীকে দ্রুত ঘায়েল করতে ট্যাকটিক্যাল বেল্টে থাকা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবে অনায়াসেই।’
আইজিপি বলেন, উন্নত দেশের আদলে পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় দায়িত্ব পালনকালে সাধারণত যেসব সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতে হয় তা এ বেল্টে এমনভাবে সংযোজন করা হয়েছে যাতে তারা 'হ্যান্ডস ফ্রি' রেখে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এর ফলে উন্নত দেশের পুলিশের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশের গেট আপে পরিবর্তন আসবে, পুলিশের দক্ষতা বাড়বে এবং জনগণকে আরো সহজে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ারে তিনটি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান আইজিপি। সেগুলো হলো- ট্যাকটিক্যাল বেল্ট, স্মল আর্মস উইথ থাই হোলেস্টার ও হ্যান্ডস ফ্রি কমিউনিকেশন।
পুলিশ প্রধান আরো বলেন, ‘এটা চালু করার কিছু উদ্দেশ্য আছে আমাদের। যেমন : পুলিশ সদস্যদের অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়াতে হাত খালি রাখা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রুটিন দায়িত্ব পালনের সময় ভারি অস্ত্রের চেয়ে হালকা অস্ত্র ব্যবহার করা। এটি পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘক্ষণ দায়িত্ব পালনকে সহজ করবে।’
এ সময় আইজিপি এটাও উল্লেখ করেন যে, তবে, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বড় অস্ত্রের ব্যবহার অব্যাহত থাকবে।
এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক দেশের মতো বাংলাদেশ পুলিশকেও গড়ে তোলা হবে বলে জানান আইজিপি। তিনি আরো বলেন, পুলিশ ও জনগণের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে আনা হবে এবং পুলিশি সেবাকে আরো সহজসাধ্য করা হবে।
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজিপি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী বক্তব্য দেন। এ ছাড়া সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের নেতৃত্বে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। ডিএমপির পুলিশ কনস্টেবল থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অতিরিক্ত আইজিপি ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যখন পুলিশে যোগদান করি তখনকার পুলিশিং আর এখনকার পুলিশিং এক নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। আগামীতে আরো পরিবর্তন হবে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিয়ে সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে হবে। কারণ, মানুষ আপনার কাছ সেবা প্রত্যাশা করে।’
ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জনবান্ধব পুলিশ হয়ে উঠতে হবে আমাদের। বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য এই পুলিশই আগে গুলি চালিয়েছিল। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব অনেক। দেশের হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনাকালের শুরুতে পুলিশ যেমন প্রশংসিত হয়েছিল, সব সময় তেমন প্রশংসা পাওয়ার মতো কাজ করতে হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের প্রায় ১০ হাজার সদস্যকে দেওয়া হচ্ছে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট। কনস্টেবল থেকে শুরু করে এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের এ সরঞ্জাম দেওয়া হবে। প্রথমে ছোট পিস্তল নিয়ে চিন্তা শুরু হলেও অন্যান্য সুবিধার কথা ভেবে আরো কিছু জিনিস সংযোজন করা হয়েছে।
সূত্রটি বলছে, পরিবর্তন আসছে ওয়্যারলেস সেটেও। এখন থেকে সেট হাতে নিয়ে কথা বলতে হবে না। ট্যাকটিক্যাল বেল্টে যুক্ত ওয়্যারলেস সেটের জন্য কানে হেডফোন এবং পোশাকের কলার অথবা বোতামে থাকবে স্পিকার।