নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার জেলা সদর, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে সব উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভেসে গেছে পুকুর ও ফিসারির মাছ।
স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসীসূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার প্রধান নদী সোমেশ্বরী, উদ্ধাখালী, ধনু, কংশ, মগড়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়।
জেলার দুর্গাপুর, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করে। খারাপ অবস্থায় আছে কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও বারহাট্টা।
ওই সব উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সদর উপজেলার মেদনী, কে. গাতী, ঠাকুরাকোনা ইউনিয়নের কমপক্ষে ১৫টি গ্রামে বাড়িঘর, সড়ক তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ভারি বর্ষণে জেলা শহরের কাটলী, জয়নগর, সাতপাই এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার সঙ্গে প্রায় সবকটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরের বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। চাল, শুকনো খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ করা হচ্ছে এবং গবাদি পশু রাখার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কলমাকান্দার বাসিন্দা মো. ওবায়দুল বলেন, ‘পানিতে উপজেলার সব কিছু তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও ফিসারির মাছ। দোকানের ভেতর পানি প্রবেশ করেছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছে।
সদর উপজেলার ঠাকুরাকোনা গ্রামের কৃষক ইমরান শাহ ফকির বলেন, ‘শুনেছি, এই এলাকায় ৮৮ সালের বন্যায় মানুষের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছিল। এরপর আর এমন পানি দেখিনি। এবার বাড়ির উঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। ঘর থেকে বের হতে পাড়ছি না।’
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত জানান, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার প্রধান নদী সোমেশ্বরী, কংস, ধনু, উব্দাখালিসহ ছোট-বড় সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। উব্দাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘জেলা থেকে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। গবাদি পশুকে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।’