নেত্রকোনায় সরিষার বাম্পার ফলন
নেত্রকোনায় সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ফসলের মাঠে কিছুদিন আগেও যেখানে বাতাসে দুলছিল হলুদ ফুল। ফুলে ফুলে মধু আহরণে ভিড় ছিল মৌমাছিদের। বর্তমানে সেই ফসলের মাঠে এখন চলছে সরিষা মাড়াইয়ের ধুম। জেলার বিভিন্ন উপজেলার ফসলের মাঠজুড়ে শুকনা গাছ থেকে সরিষার দানা বের করছেন কৃষকরা। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর বেড়েছে সরিষার আবাদ। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। ভালো ফলনে খুশি সরিষাচাষিরা।
এ বছর আবহাওয়া অনকুলে থাকায় ভালো ফলন হয়েছে বলে জানান প্রান্তিক চাষিরা।
সরিষা আবাদ বৃদ্ধির লক্ষে সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সার, বীজসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন বলে জানায় স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
নেত্রকোনায় আমন ও বোরো ফসলের মাঝের সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ লাভজনক হওয়ায় এর আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া সরিষা আবাদে সেচ ও সার খরচ কম হওয়ায় এর আবাদ কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় পাঁচ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে এক হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি।
মদন উপজেলার রত্নপুর গ্রামের কৃষক তারা মিয়া, ফতেপুর গ্রামের নয়ন মিয়া, চানগাঁও গ্রামের সুদর্শন আচার্য বলেন, ‘আমাদের যে জমিতে শুধু পাট চাষ হতো, সেই জমিতে এখন ধানসহ তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারছি। আমন ধান কাটার পর পরই সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস বিনা মূল্যে সার, বীজ দেওয়ায় আমরা উৎসাহিত হয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের তুলনায় সরিষা চাষে এ বছর অধিক লাভবান আমরা।’
চাষিরা আরও বলেন, ‘এক কাঠা (১০ শতাংশ) জমিতে ধান হয় সাত থেকে আট মণ। বাজার মূল্যে যা বিক্রি করে পাওয়া যায় পাঁচ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে তেমন লাভ থাকে না। কিন্তু এক কাঠা জমিতে সরিষা পাওয়া যায় এক থেকে দেড় মণ। যার বাজার মূল্য ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। ধানের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম থাকায় অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে সরিষাতে। তা ছাড়াও খাঁটি তেল খাওয়া ও ব্যবহার করতে পারছি আমরা কৃষকরা।’
হাওর বেষ্টিত মদন উপজেলা ধাননির্ভর হলেও এ বছর এর ব্যতিক্রম। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাস্টার আকারে সরিষার চাষ করতে কৃষকদের সহায়তা করা হয়েছে।
মদন উপজেলার রত্নপুর, মৈদাম, চানগাঁও, মদন পৌরসভা, তিয়শ্রী, কাইটাইল, নায়েকপুর, ফতেপুরসহ সদর ইউনিয়নে সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। উপজেলার এক হাজার ৯০০ কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে এক কেজি করে সরিষা বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরিষা চাষের পদ্ধতি বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এতে একমাত্র ধান নির্ভর উপজেলার চাষিরা বিনা খরচে লাভের মুখ দেখছে।
ধানের তুলনায় সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আগামী বছর আরও বেশি জমিতে সরিষা চাষে ঝুঁকবে বলে জানান মদন উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, গেল মৌসুমে মদন উপজেলায় মাত্র ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছিল। এ বছর সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবাদ হয়েছে এক হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এতে উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৩০০ মেট্রিক টন সরিষা। যার বাজার মূল্য হবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বলেন, সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি তেল ফসলের আবাদ বৃদ্ধির জন্য এ বছর জেলায় ২১ হাজার কৃষক পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।