পরী মণির জামিন আবেদন শুনানির অধিকার রয়েছে : হাইকোর্ট
রাজধানীর বনানী থানায় করা মাদক মামলায় গ্রেপ্তার চিত্রনায়িকা পরী মণির নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন অবিলম্বে শুনানি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত জামিন শুনানির যে দিন নির্ধারণ করেছিলেন, তা কেন বাতিল করা হবে না মর্মে রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
একইসঙ্গে আগামী ১ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত এবং ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
দুপুর ২টায় শুনানিকালে পরী মণির আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, ‘মাই লর্ড, চিত্রনায়িকা পরী মণিকে গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করা হয়নি। বরং জব্দ তালিকা ও আটকের সময়ের মধ্যে মিল নেই। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে কয়েক দফা আবেদন করার পরও জামিন না দেওয়ায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করি। কিন্তু সেখানে জামিনের আবেদনটির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন। আবেদনের ২১ দিন পরে দিন ধার্য করেছেন। আমরা এ কারণে উচ্চ আদালতে আসতে বাধ্য হয়েছি।’
এ সময় আদালত বলেন, ‘২১ দিন পরে তারিখ দেওয়ার কী আছে? অভিযুক্তের (পরী মণি) জামিন আবেদন শুনানির অধিকার আছে। কিন্তু মহানগর দায়রা জজ জামিন আবেদন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য রেখেছেন, যা আবেদনকারীর অধিকার ও স্বাধীনতাকে খর্ব করে।’
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, ‘পরী মণির আইনজীবী নিম্ন আদালতের আদেশ যেভাবে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছেন, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কেননা জামিন শুনানির জন্য নিম্ন আদালত তারিখ নির্ধারিত করেছেন। এখানে অবৈধ বলতে কিছু নেই।’
এ সময় পরী মণির অপর আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত, মেয়েটাকে (পরী মণি) গ্রেপ্তারের ২৬ ঘণ্টা পর মামলার এজাহার দাখিল করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানা হয়নি।’
এ সময় পরী মণির আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান আবারও যুক্ত হয়ে বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত গত ২২ আগস্ট এক আদেশে ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তবে এই শুনানি এগিয়ে আনতে পরদিন ২৩ আগস্ট পৃথক একটি আবেদন দেওয়া হলেও আদালত তা আমলেই নেননি। ২১ দিন দেরিতে জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে দেওয়া আদেশ যথাযথ হয়নি। এ অবস্থায় আপনাদের কাছে জামিন চাচ্ছি।’
জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, ‘দায়রা জজ আদালতের ওই আদেশে বেআইনি কিছু নেই।’
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘দায়রা আদালতের আদেশে কিছু অনিয়ম হয়েছে। জামিন আবেদনের ওপর শুনানি এত দিন ঝুলিয়ে রাখা কি ঠিক হয়েছে? এত দিন পর শুনানির কী আছে? ঝুলিয়ে না রেখে খারিজ করতে পারতেন। আর তিনি শুনানির জন্য সময় না পেলে অতিরিক্ত দায়রা জজকে শুনানির জন্য দিতে পারতেন। কিন্তু তা দেননি। তবু বলছি, প্রথা অনুযায়ী এসব ক্ষেত্রে (জামিন আবেদন) হাইকোর্ট ও দায়রা জজ আদালতের এখতিয়ার সমান। তাই আমরা এ মুহূর্তে জামিন দিচ্ছি না। রুল দিচ্ছি।’
পরে আদালত আদেশে গত ২৩ আগস্ট দেওয়া আবেদন আদেশের কপি পাওয়ার দুদিনের মধ্যে শুনানির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং গত ২২ আগস্ট নিম্ন আদালতের দেওয়া আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
গতকাল বুধবার জামিন শুনানির জন্য নিম্ন আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর যে দিন ধার্য করেছিলেন, তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরী মণি। আজ সেটির শুনানি হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু এহিয়া দুলালও যুক্ত ছিলেন।
গত ৪ আগস্ট রাতে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরী মণি ও তাঁর সহযোগী দীপুকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় পরী মণির বাসা থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়। পরদিন ৫ আগস্ট র্যাব-১ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পরী মণি ও তাঁর সহযোগীর বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে।
এই মামলায় তিন দফায় রিমান্ড শেষে গত ২১ আগস্ট আদালতের নির্দেশে পরী মণিকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন গত ২২ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে পরী মণির জামিন আবেদন করেন আইনজীবী মজিবুর রহমান। পরে আদালত জামিন বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
১৩ সেপ্টেম্বর জামিন শুনানির দিন ধার্য করার আদালতের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে গতকাল বুধবার হাইকোর্টে আবেদন করেন পরী মণি। আবেদনে পরী মণির জামিনের আর্জিও জানানো হয়। আজ তার শুনানি হয়।