প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সঙ্গে জোর জবরদস্তি করা যাবে না : হাইকোর্ট
এক রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘সন্তানের সঙ্গে বাবা-মাকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। সন্তানের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দিতে হবে। কোনো বিষয়ে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের সঙ্গে জোর জবরদস্তি করা যাবে না।’
রাজধানীর উত্তর মুগদাপাড়ার বাসিন্দা ১৯ বছরের কানাডীয় তরুণী লামিসা ইসলামের বাবা-মার উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘তাকে ফ্রিডম দিতে হবে। সে কানাডায় যেতে চায়, সেখানে পড়তে চায়। বাবা-মাকে সেই সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। দুয়ার বন্ধ রাখা চলবে না।’
পরে আদালত ১৯ বছরের কানাডিয়ান ওই তরুণীর ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ এবং তাকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুযোগ দিতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই তরুণী বাবা-মায়ের কাছে থাকবেন বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
১৯ বছর বয়সি কানাডীয় তরুণীকে গৃহবন্দি রাখার অভিযোগের রিটের শুনানিতে আজ রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।
আদালতে তরুণীর বাবা-মায়ের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অজি উল্ল্যাহ। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আজিম উদ্দীন পাটোয়ারী। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। এ ছাড়া কানাডীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিকালে তরুণীর বাবা-মায়ের আইনজীবী অ্যাডভোকেট অজি উল্ল্যাহ বলেন, ‘মাইলর্ড তরুণী বাবা-মায়ের বাসায় রয়েছে। এখানে গৃহবন্দি করে রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাকে বিভিন্ন সময়ে বাইরে ঘুরতে নেওয়া হয়েছে।’ এ সময় আদালত খাস ক্যামরায় তরুণীকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মূলত তরুণী নিজে কানাডায় ফিরে যেতে চান। তাঁর সঙ্গে তার বাবা-মাও যাবে বলে জানায়। পরে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ৫ এপ্রিল ১৯ বছরের তরুণীর অসম্মতিতে তাকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। ওইদিন দুপুরে মুগদা থানার পুলিশ ও তার বাবা-মা তরুণীকে নিয়ে আদালতে হাজির হয়।
রিটের নথি থেকে জানা যায়, ১৯ বছরের ওই তরুণী লামিসা ইসলামের জন্ম কানাডায়। তিনি জন্মসূত্রে কানাডার নাগরিক। কানাডার টরন্টোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তার বাবা তাজুল ইসলাম ও মা শামীমা নাজনীন কানাডায় থাকতেন। ১০ মাস আগে তার বাবা-মা বেড়ানোর কথা বলে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যেতে চাইলেও তাকে যেতে দেওয়া হয়নি।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাকে তার নানী ও মা সব সময় বাসায় বন্দি করে রাখেন। এক পর্যায়ে ওই তরুণী ল্যান্ড ফোনে কানাডা সরকার ও ঢাকায় কানাডীয় হাইকমিশনকে তাকে জোরপূর্বক ঘরবন্দি করে রাখার কথা জানান। ওই তরুণী কানাডায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদা থানায় কানাডীয় হাইকমিশন থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। তারপর হাইকমিশনের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র হাইকোর্টে রিট করে। রিটে পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং ওই তরুণীর বাবা-মাকে বিবাদী করা হয়।