ফুটপাতের অবৈধ দখল উচ্ছেদে হাইকোর্টের রায়ের বাস্তবায়ন নেই
রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার একযুগ পরও সে আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। এতে করে ভোগান্তিতে ঢাকা কোর্টের বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীসহ সাধারণ মানুষ। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ করা হলেও কয়েকঘণ্টা পর আবার সেই পুরোনো চিত্র দেখা যায়।
২০১২ সালে প্রতিকার চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়। শুনানি শেষে ট্রাফিক জ্যামের ভোগান্তি দূর করতে জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং বন্ধ, রাস্তার পাশের ফুটপাত বা রাস্তায় দোকানের পণ্য রাখা বন্ধ, রাস্তা-ফুটপাতে যেন ফেরিওয়ালা ও ফলের দোকান বসতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা গত দশ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুটপাত তৈরি করা হয়েছে মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য। ফুটপাত ব্যবহার করে মানুষ যেন অনায়াসে চলাফেরা করতে পারে। কিন্তু রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত পুরো ফুটপাত দোকানপাট নির্মাণ ও ভাসমান হকারদের দখলে। শুধু ফুটপাত নয়, রাস্তার ওপরও গড়ে উঠেছে দোকান। ফলে ফুটপাতে চলাচল করতে পথচারীদের অসুবিধা হয়। অনেক সময় ফুটপাতের এ অবস্থার জন্য পথচারীদের রাস্তার পাশ দিয়ে চলতে হয়। বিশেষ করে নারীদের চলাচলে বেশি অসুবিধা দেখা দেয়। এসব দোকানে জনসাধারণের ভিড়ের কারণে নারী পথচারীদের চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের প্রধান সড়কে হাঁটতে হয়।
রাজধানী ঢাকায় ফুটপাতে ব্যবসা করছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। এদের উচ্ছেদ করতে গেলেও অনেক সময় প্রশাসনকে জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়। সড়কে যানজট দেখা দিলে অনেক সময় মোটরসাইকেলচালক ফুটপাতের পথ ব্যবহার করে থাকে। এতে করে নিরাপদ ফুটপাতও অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে এবং কিছু দুর্ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে।
এ বিষয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের সভাপতি অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সংবিধানের বিধানে আদালতের আদেশ কার্যকর করার কথা বলা আছে। কেউ যদি সেই নির্দেশনা কার্যকর না করে, তাহলে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা আছে। সংশ্লিষ্ট অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, জনস্বার্থে এইচআরপিবির করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছিলেন। ওই রায়ে জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার ওপর দোকান, ফেরিওয়ালা, ফলের দোকান; ফুটপাত বা রাস্তার ওপর বালু, রড বা যেকোনো মালামাল রাখা এবং ভ্যান ও ঠেলা গাড়ি পার্কিং ইত্যাদি দখলমুক্ত করতে বলা হয়। একইসঙ্গে ৩০ দিন পরপর একটি ট্রাফিক দলকে ওই রায় কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটির প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পরও এখন পর্যন্ত ফুটপাত ও রাস্তা দখলমুক্ত হয়নি। এ রায় বাস্তবায়নে এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকার চার ওসিকে নোটিশ দেওয়া হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা বিষয়টি আদালতে আবারও উপস্থাপন করবো।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘দেশে জনসংখ্যা, যানবাহনসহ সবকিছু বেড়েছে, সমস্যাও বেড়েছে। তাই কিছু ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আদালতের নির্দেশনার পরও যে তা কার্যকর হচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। যেসব নির্দেশনা সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারে কিন্তু করে না, সেক্ষেত্রে আদালত অবমাননার অভিযোগের ব্যবস্থা রয়েছে।’
শফিক আহমেদ আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ যদি সচেতন না হয়, তাহলে রাষ্ট্রই বা কী করবে? তাই শুধু সরকারের ওপর নির্দেশ দিলেই হবে না, জনগণকে আরও মনোযোগী ও সচেতন হতে হবে।’