‘বাজেট উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবে’
জাতীয় বাজেট অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বাজেট উপলক্ষে চট্টগ্রামের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চেম্বার সভাপতি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা ও দেশীয় শিল্পকে সুবিধা দেওয়া অর্থনীতিকে বেগবান করবে উল্লেখ করে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘এ বাজেট দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং একইসঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী।’
চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি খাতে ৪৮ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা এবং যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৫৯ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ ইতিবাচক। তবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি। ব্যক্তিগত করদাতাদের ব্যবসায়িক টার্নওভার ০.৫% থেকে পরিবর্তে ০.২৫% করা হয়েছে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানির করহার ২৫% থেকে কমিয়ে ২২.৫০%, নন-পাবলিকলি কোম্পানীর ৩২.৫০% থেকে কমিয়ে ৩০% করা হয়েছে এবং এক ব্যক্তি কোম্পানীর ক্ষেত্রে ৩২.৫% থেকে কমিয়ে ২৫% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আয় না থাকলে সম্পদের ওপর সারচার্জ পরিশোধের বিধান বাতিল করা হয়েছে এবং ন্যূনতম সারচার্জ বিলুপ্ত করা হয়েছে যা প্রশংসনীয়।’
তবে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা হয়নি, আমরা এ সীমা বৃদ্ধি করার দাবি জানান তিনি।
চেম্বার সভাপতি বলেন, ‘আমদানি পর্যায়ে সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল এর অগ্রিম কর ৩% এর পরিবর্তে ২% এবং সিমেন্ট এবং লৌহ জাতীয় পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৩% থেকে ২% নির্ধারণ করায় নির্মাণ শিল্প এবং রপ্তানি উপকৃত হবে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে মেগা শিল্প উৎপাদনে এবং হোম অ্যাপ্লায়েন্সেরৱ ক্ষেত্রে ২০ ও ১০ বছরের কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ভবনের অবচয় ১০% থেকে কমিয়ে ৫%, কারখানা ভবনের অবচয় ২০% থেকে কমিয়ে ১০% করা হয়েছে যা ইতিবাচক। আইটি হার্ডওয়্যার উৎপাদনে ১০ বছরের কর অব্যাহতি, এসএমই খাত ও নারী উন্নয়নে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার করমুক্ত রাখা, বাংলাদেশে অটোমোবাইল, থ্রি হুইলার, ফোর হুইলার উৎপাদনে এবং হাল্কা প্রকৌশল শিল্পের পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিকে কর অব্যাহতি প্রদান দেশীয় শিল্পের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে আমরা মনে করি।’
মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদানে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানকে ১০ কর অব্যাহতি প্রদান শিল্পায়নে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের কাঁচামাল/উপকরণ আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর ৪% থেকে কমিয়ে ৩% করা হয়েছে যা শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে।’
চট্টগ্রাম শাহ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর উন্নয়ন ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে এই বিমান বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। তবে বে-টার্মিনাল নির্মাণে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা এবং চলমান মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের দাবি জানান চেম্বার সভাপতি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতকরণসহ দ্রুতগতির ট্রেন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ভ্যাট ফাঁকি, ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ দ্বিগুণের পরিবর্তে সমপরিমাণ এবং বকেয়া ভ্যাটের সুদহার বার্ষিক ২৪% এর পরিবর্তে ১২% করা ভ্যাট দাতাদের উৎসাহিত করবে।’
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘কৃষি খাতে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্কহার অব্যাহত রাখা এবং রেয়াতি শুল্ক হারে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানি সুবিধা সম্প্রসারণ, অন্যান্য নিত্য সামগ্রী আমদানিতে প্রযোজ্য শিল্প করহার স্থিতিশীল অবস্থা রাখা, কৃষি উপকরণ আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনে কর হ্রাস এই খাতের প্রসারে ভূমিকা রাখবে। ফল, শাক-সবজি, দুগ্ধজাত পণ্য ও শিশু খাদ্য উৎপাদনে কর অব্যাহতি প্রশংসনীয়।’
‘বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাইরে ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল বা ২০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ১০ বছর কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে যা স্বাস্থ্যসেবা প্রসারে কাজ করবে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে সারা দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দের আবেদন জানাচ্ছি।’-যোগ করেন চেম্বার সভাপতি।
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে এক লাখ সাত হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে সরাসরি এ সুবিধা পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা দুই লাখ আট হাজার জন বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান করোনাজনিত পরিস্থিতিতে এসব পদক্ষেপ পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠিকে জীবন ধারণে সহায়তা করবে।’
‘বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাসে দেশীয়ভাবে গৃহস্থালী পণ্য যেমন- ব্রেন্ডার, জুসার, মিকচার, গ্রাইন্ডার, কেটলি, রাইচ কুকার, প্রেসার কুকার, ওয়াশিং মেশিন, ওভেন ইত্যাদি উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে যাতে দেশীয় উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবে।’ যোগ করেন মাহবুবুল আলম।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম সব শেষে বলেন, ‘সড়কে নসিমন, লেগুনা ইত্যাদি দুর্ঘটনাপ্রবণ যানবাহণ নিরুৎসাহিত করতে বিকল্প হিসেবে মাইক্রোবাস আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। এছাড়া ডাম্পার/ট্রিপার সিকেডি আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস এবং মোটর সাইকেল উৎপাদনকারী/সংযোজনকারী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সুবিধা প্রদান দেশীয় এসব শিল্প সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।’