বাবার হেফাজতে জাপানি দুই শিশু, মায়ের জন্য ৩০ দিন
জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরানের দুই কন্যা তাদের বাবার হেফাজতে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ রোববার দুই শিশুর জিম্মা নিয়ে জাপানি মায়ের করা রিট চলমান রেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালত রায়ে মাকে তাঁর সুবিধাজনক সময়ে প্রতি বছর তিনবার ১০ দিন করে শিশুদের সঙ্গে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। এই তিনবার জাপানি মায়ের বাংলাদেশে আশা-যাওয়ার খরচ শিশুদের বাবাকে বহন করতে বলা হয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি এলে সে খরচ মাকে বহন করতে হবে।
এ ছাড়া সপ্তাহে দুবার ভিডিও কনফারেন্সে মায়ের সঙ্গে শিশুদের কথা বলিয়ে দিতে বাবার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এই রিটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে থাকার খরচ হিসেবে মাকে ১০ লাখ টাকা দিতে শিশুদের বাবার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তাকে এই শিশুদের বিষয়ে তিন মাস পর পর আদালতে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি-যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে সেরে টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন মেয়ে জন্ম নেয়। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিলেন।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এরপর একদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
গত ২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে গত ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
গত ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় হস্তান্তরের আদেশ দেন। তবে দুই মেয়ে বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি নিয়ে তিনি বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। এরপর গত ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন।
বাংলাদেশে এসে এরিকো করোনা পরীক্ষা করালে তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরেও ইমরান ওই রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাঁকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।
১৯ আগস্ট সকালে দুই মেয়েকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো। রিটে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করেন ওই নারী।
এরপর আদালত বিভিন্ন সময়ে দুই শিশুর বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং সময়ে দিয়ে বাবা ও মায়ের মধ্যে সমঝোতার কথা বলেছেন। কিন্তু সমঝোতা হয়নি বলেই তাদের আইনজীবীরা আদালতে জানিয়েছেন।
গত ১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তার বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবেন নাকি মা নাকানো এরিকোর সাথে জাপানে চলে যাবেন, সে শুনানি শেষ হয়। আজ রায় দিলেন আদালত।