ভরণপোষণ না দেওয়ায় মামলা, বৃদ্ধার বাড়িতে গেলেন বিচারক
চিকিৎসার অভাবে শয্যাশায়ী ৭৫ বয়সী এক বৃদ্ধা দুই সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই বৃদ্ধা নিজে আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলা করতে না পারায় বিচারক নিজে বৃদ্ধার বাসায় গিয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় বরিশালের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ মামলাটি গ্রহণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
মামলায় বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়ার জোড়াপুকুর এলাকার জাহানুর বেগম তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারকে আসামি করেছেন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ‘খুলনায় আমি স্বামীর ঘরে থাকতাম। আমার চিকিৎসার খরচের জন্য আমি খুলনার সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেই। ক্রেতা বরিশালে এলে তাদের সঙ্গে কথাও বলি। ২২ অক্টোবর আসামিরা বরিশালে এসে সম্পত্তি বিক্রি করতে দেবেন না বলে জানান এবং আমি অসুস্থ, ভরণপোষণ দরকার বললেও তারা আমার ভরণপোষণ দিতে পারবে না বলে জানায়। কোনো টাকাপয়সাও দিতে পারবে না এমন স্পষ্ট বলে দেয়। এরপর আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তারা চলে যায়। এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেয়নি।’
বৃদ্ধা মামলায় আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই। সর্বশেষ ব্রেইন স্ট্রোক, মেরুদণ্ড অচল এবং পিঠে ক্ষত ও প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হই।’
মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও ভরণপোষণের আবেদন করা হয়।
বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ‘জাহানুর বেগম পিতামাতার ভরণপোষণ আইনে মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে ওকালতনামাসহ নালিশি দরখাস্ত বাহক মারফত আদালতে পাঠিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নালিশি দরখাস্তের বাহককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিচারক জানতে পারেন বাদী শয্যাশায়ী, যার কারণে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। এই অবস্থায় প্রকাশেয বাদীকে পরীক্ষা করা যায়নি। তবে এজলাসের কার্যক্রম শেষে আমাকে সঙ্গে নিয়ে বিচারক নালিশি দরখাস্তের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বাদীর বাসায় যান। বাদী বৃদ্ধার আইনজীবী ও আমার উপস্থিতিতে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন বিচারক। বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করা হয়। বিচারক মাসুম বিল্লাহ সমন জারি করার পাশাপাশি ১ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন।
জাহানুর বেগম বর্তমানে তার ছোট মেয়ে সাহিদার সঙ্গে বসবাস করছেন।
এদিকে, এই জাতীয় পদক্ষেপ মানুষের দোরগোড়ায় বিচার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস।