ভৈরবে বারি-৪ ও বারি-১১ আম চাষে সাফল্য
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বারি-৪ ও বারি-১১ জাতের আমের চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের চাষিরা। কৃষি বিভাগের মতে, ভৈরবের আবহাওয়া ও মাটি এই দুই জাতের আম চাষের জন্য উপযুক্ত। ফলে এই আম চাষে চাষিদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, মৌসুমের সব জাতের আমের বাজারজাতকরণ শেষে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে পাকে বারি-৪ ও বারি-১১। ফলে তখন বাজারদর ভালো থাকে। আর এ জাতের আম খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায়, ক্রেতা চাহিদাও থাকে ব্যাপক। এতে আম বিক্রি করে বেশ লাভবান হন চাষিরা।
এ ছাড়া এ জাতের আম বাড়ির পাশের পতিত জমি, ফসলি জমির আইল অথবা অন্য ফসল বা ফলের বাগানের চারপাশেও চাষ করা যায়। ফলে শুধুমাত্র আম চাষের জন্য বাড়তি জমির প্রয়োজন পড়ে না।
এ জাতের আম কাঁচা অবস্থাতেও খেতে মিষ্টি। চারা রোপণের পরের বছরই ফুল আসে। তবে গাছ তখন বেশি ছোট থাকায় ফলনের ভার বইতে পারবে না বলে চাষিরা ফুলসহ ডাল ভেঙে দেন। এতে পরের বছর অল্প এবং তৃতীয় বছর থেকে ভালো ফলন শুরু হয়।
এ জাতের আমের চাষ করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এর মধ্যে কালিকা প্রসাদ ইউনিয়নের ঝগড়ারচর এলাকার কৃষক আলহাজ মো. সানাউল হক চাঁন মিয়া ও একই ইউনিয়নের আতকাপাড়া এলাকার ডা. মিজানুর রহমান কবির অন্যতম।
আলহাজ মো. সানাউল হক চাঁন মিয়া জানান, তাঁর মাল্টা ও কলা বাগানের চারপাশে এই দুই জাতের ৪২টি চারা রোপণ করেছিলেন। এ পর্যন্ত তাঁর মোট খরচ হয়েছে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা। গত বছর থেকে ফলন আসা শুরু হলেও, বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু করবেন এই বছর থেকে। চলতি বছর যে ফলন এসেছে, তাতে ৫০০- ৬০০ কেজি আম বিক্রি করা যাবে। দর ভালো থাকলে তিনি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপর কৃষক ডা. মিজানুর রহমান কবির জানান, তাঁর পাঁচ বছর বয়সী আমবাগানে দেড় শতাধিক গাছ রয়েছে। তিনি গত দুই বছর ধরে আমের ফলন ভোগ করছেন। এই বছর প্রচুর ফলন আসায় সেগুলো তিনি বাজারে বিক্রি করবেন। তাঁর ধারণা, চলতি বছর তিনি ১১শ থেকে ১২শ কেজি আম বিক্রি করতে পারবেন।
উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা চন্দন কুমার দাস জানান, তাঁরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের এই দুই জাতের আম চাষে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় বর্তমানে অনেক এলাকায় কৃষক এই জাতের আম চাষের দিকে ঝুঁকেছেন। ফলে তাদের পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণসহ বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর ভৈরবে ১৪৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। যার অধিকাংশই বারি-৪ ও বারি-১১ জাতের হাইব্রিড আম।
ভৈরবের আবহাওয়া ও মাটিকে এই দুই জাতের আম চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী উল্লেখ করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকলিমা বেগম জানান, কৃষি বিভাগের নানামুখী উদ্যোগের কারণে এই উপজেলায় দিন দিন আম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।