মাদানীর মাদ্রাসায় তালা, মামলার এজাহারে যা আছে
গাজীপুর মহানগরের বাড়িয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে অবস্থিত মারকাজুন নূর আল ইসলামিয়া আবাসিক মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও পরিচালক।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, মাদ্রাসাটির ফটকে দুইটি তালা ঝুলছে।
এদিকে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে র্যাবের করা মামলায় গাজীপুরের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ওই মামলায় আজ সকালে তাঁকে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার ইলতুৎ মিশ জানান, গত বুধবার রাতে শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে র্যাব-১-এর সদস্যরা। তিনি ওই এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। আটকের পর রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ওই রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় হস্তান্তর করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। র্যাব-১-এর জেসিও-৮৭২৭ নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মো. আব্দুল খালেক বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বৃহস্পতিবার সকালে মাদানীকে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত থেকে পুলিশ ও র্যাবের কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে করে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গাজীপুর জেলা কারাগার নিয়ে যাওয়া হয়।
র্যাব-১-এর সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার জানান, আটক রফিকুল ইসলাম মাদানীর কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তাঁর মোবাইল ফোনে আপত্তিকর ও কুরুচিপর্ণ ছবি ও ভিডিও চিত্র এবং লিংক পাওয়া গেছে, যা তাঁর ভণ্ড চরিত্রের পরিচয় বহন করে।
গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. বজলুর রশিদ আকন্দ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে এ কারাগারে বুঝে নেওয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা থানাধীন বোর্ড বাজার কলমেশ্বর এলাকার শীতক ফ্যাক্টরির ভেতরে এক ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেন রফিকুল ইসলাম মাদানী। মাহফিলে তিনি রাষ্ট্র তথা সরকারবিরোধী ও আইন শৃঙ্খলাপরিপন্থি উসকানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করেন। যা তাঁর নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায়। উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে তাঁর অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন করা, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানো, আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতাসহ সরকারের প্রতি ঘৃণাভাব সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বক্তব্য প্রদান করেন, যা ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, রফিকুল ইসলাম মাদানী বিভিন্ন সময়ে দেশ ও সমাজের জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এরূপ উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থি বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত থেকে ধর্মীয় অর্থাৎ কোরআন হাদিসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।