ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারিক আদেশ রিটে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না
ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট যে আদেশ দেবেন, সে আদেশের যদি রিভিশনাল (আপিল) ফোরাম থাকে, তাহলে তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা যাবে না।
রাজধানীর জুরাইনে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামলায় দুই আইনজীবীর রিমান্ডের বৈধতা নিয়ে করা রিটের রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ওই রিটে হাইকোর্টের জারি করা রুল খারিজ করে গত ১৯ জুন দেয়া আপিল বিভাগের রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ আসে।
৭ জুন সকাল পৌনে ১০টার দিকে জুরাইন রেলগেট এলাকায় উলটোপথে আসছিল একটি মোটরসাইকেল। তাতে এক নারীসহ দুই আরোহী ছিলেন। কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট আলী হোসেন কাগজপত্র দেখতে চাইলে মোটরসাইকেলের চালকের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। যাত্রীরা ট্রাফিক সার্জেন্টের পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরে দুজনকে পুলিশ বক্সে নেওয়া হলে সঙ্গে থাকা নারী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার জেরে এলাকাবাসী সার্জেন্টকে মারধর করে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায়। এ নিয়ে ওইদিন রাতেই তিন জনের নাম উল্লেখ করে ৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ।
এ মামলায় ৮ জুন আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাতসহ পাঁচজনের তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন। পাঁচ জনের মধ্যে এক জন আইনজীবী এবং এক জন শিক্ষানবিশ আইনজীবী ছিলেন।
আইনজীবীদের রিমান্ডের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চআদালতে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফজলে এলাহী। সে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ জুন হাইকোর্ট মামলার নথি তলব করে রিমান্ডের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন।
এ আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদনের পর চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় ১৪ জুন আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আসে।
ওইদিন আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলে ১৯ জুন পর্যন্ত মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন। একই সঙ্গে রিট আবেদনকারীর আইনজীবীদের অধস্তন আদালতে জামিনের জন্য আবেদন উপস্থাপন করতে বলেন। এরপর ওইদিন আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাতকে জামিন দেন অধস্তন আদালত।
গত ১৯ জুন রোববার শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে হাইকোর্টের রুল খারিজ করে করে দেন আপিল বিভাগ। এই রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির অধীনে ম্যাজিস্ট্রেট এই আদেশ (রিমান্ড) দিয়েছেন। জনস্বার্থে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই আদেশ চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ সেশন কোর্টের রিভিশনাল বিচারে সংশোধনযোগ্য।
কেউ যদি ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড আদেশে সংক্ষুব্ধ হন তাহলে তাঁরা রিভিশন চেয়ে সেশন কোর্টে আবেদন করতে পারেন। তৃতীয় পক্ষ এ রিমান্ড আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে হাইকোর্টে রিট করার এখিতয়ার নেই।
আদালত আরও বলেন, আইনের ভেতরে থেকে যখন কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা আদেশ দেন তখন ১০২ অনুচ্ছেদের অধীনে সেই আদেশে হস্তক্ষেপ করা যায় না। এ রিটে হাইকোর্টের আদেশে মনে হচ্ছে ম্যাজিস্ট্রেটের রিমান্ড আদেশ বিচারিক আদেশ নয় এবং রিমান্ড আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করার কোনো ফোরাম নেই। কিন্তু রিভিশন করলে রিমান্ড আদেশ স্থগিত করার এখতিয়ার সেশন কোর্টের আছে। এসব বিবেচনায় আপিল বিভাগ রুল খারিজ করে দেন।