রাত পোহালেই ভোট, আগেই নির্বাচিত ৪৫ ইউপির চেয়ারম্যান
রাত পোহালেই প্রথম ধাপের স্থগিত ১৬০ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ ধাপের স্থগিত নয়টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ। সোমবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে তৃণমূলের এ নির্বাচন।
ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ইসি থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের ঘটনায় কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমকে শোকজ করেছে কমিশন।
ইসি আরও জানিয়েছে, ১৬০ ইউপির মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪৫ জন, চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী রয়েছেন ৫০০ জন। সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৯৬৫ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ছয় হাজার ৩৩৩ জন।
এদিকে নয় পৌরসভার মধ্যে তিনটি পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। বাকি পৌরসভায় মেয়র পদে লড়াই করবেন ২৭ জন।
নির্বাচন নিয়ে উৎকণ্ঠা ও অজানা শঙ্কায় রয়েছে ভোটার ও প্রার্থীরা। ভোট নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে সব নির্বাচনি এলাকায়। ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ ভোটাররা। যদিও ইসি ভোটারদের অভয় দিয়ে নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বাগেরহাটের মোংলার উত্তর চাঁদপাই গ্রামে গতকাল রোববার রাতে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় একজন নিহত হয়েছে। বর্তমান ইউপি সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও একজন সদস্য প্রার্থীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার সময় হামলাকারীরা চেয়ারম্যান প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয় ভাঙচুর করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার জন্য স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শহিদুল ইসলাম আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মো. বেনজির হোসেনকে দায়ী করেছেন।
এবারের ইউপি নির্বাচন বিএনপি প্রার্থী না দিলেও মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। তবে বিএনপির কিছু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনি লড়াইয়ে রয়েছেন।
ইসি বলছে, নির্বাচন নির্বিঘ্নে করতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে নির্বাচনি এলাকায়। যেসব এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে ভোট নিয়ে উত্তেজনা বেশি।
এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি বলেন, ‘দেশের ১৬০ ইউপি ও নয়টি পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে। যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ইসি।’
রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মলনে ইসি সচিব আরও বলেন, ‘তফসিল অনুযায়ী ১৬১টি ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের আদেশে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউপির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তাই ১৬০টিতে ভোট হবে। এ ছাড়া নয়টি পৌরসভা এবং দুটি উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদেও ভোট হবে এদিন।’
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে প্রথম ধাপে ৩৭১ ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ১১ এপ্রিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় ১ এপ্রিল তা স্থগিত করা হয়। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪টি ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছিল। তখন ১৬৭ ইউপির নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। তবে প্রার্থী মারা যাওয়ায় পাঁচটি ইউপি এবং মামলা জনিত কারণে একটি এবং দুর্যোগের কারণে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নে আপাতত ভোট হচ্ছে না।
সেই হিসেবে খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১৬০ ইউপি এবং নয়টি পৌরসভায় ভোট হবে আজ ২০ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া নয়টি পৌরসভার সবকটিতে এবং ১৬০ ইউপির মধ্যে ১১টিতে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে শনিবার দিবাগত রাত ১২টায়। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনি এলাকায় টহল দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। ভোট গ্রহণের জন্য গতকাল বিশেষ নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি মালামাল পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে এবারও চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে।
ইসির কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, ভোট সামনে রেখে সব ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশাবাদ ইসির
ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘নির্বাচনি উপকরণ জেলায় পৌঁছে গেছে। প্রশিক্ষণ হয়েছে। মাঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পৌরসভার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১১ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জনের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮১ জন নির্বাহী ও নয়জন বিচারিক হাকিমসহ র্যাব ও বিজিবির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
ইসি সচিব আরও বলেন, ‘ইউপির প্রতি ভোটকেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ২২ জনের ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। ৯২ জন নির্বাহী হাকিম ও ৫৭ জন বিচারিক হাকিম দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচনি অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করতে। এ ছাড়া র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ডের সদস্য মোতায়েন রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় অতিরিক্ত ফোর্স দেওয়া হয়েছে।’
৩০ শতাংশ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, ‘কেউ প্রতিযোগিতা না করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হবেই।’
বাগেরহাটে বিনা ভোটে ৩৮ জন চেয়ারম্যান :
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের বাগেরহাটের ৬৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জেলার ৬৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা ভোটে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৮ জন পদপ্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হয়েছেন।
এ ছাড়া জেলার কচুয়া উপজেলার রাড়িপাড়া ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান ও সব ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। বাকি ২৭টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের একই দলীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় অন্তত ২৫ নেতাকর্মীকে দল থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে আওয়ামী লীগ।