রাষ্ট্রপতিকে বরণ করতে উৎসবমুখর পাবনা
আগামীকাল সোমবার চার দিনের সফরে নিজ জেলা পাবনায় যাচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম সফর।
রাষ্ট্রপতির আগমনকে ঘিরে পাবনা জেলাজুড়ে বিরাজ করছে উৎসব মুখর পরিবেশ। ব্যানার-ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে সড়ক-মহাসড়কগুলো। পুরোনো ভবনগুলো নতুন রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে। শহরের দালান, দোকান, বাগান আলোকসজ্জায় ভিন্ন চেহারা ধারণ করেছে।
রাষ্ট্রপতির যাতাযাতের সড়ক ও পরিদর্শনের স্থানগুলো মেরামত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।
রাষ্ট্রপতিকে বরণ করতে পুরো শহরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আগমনকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন স্থানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হচ্ছে। হাতি, বাদ্যযন্ত্রসহকারে বিশাল শোভাযাত্রায় ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশ নিচ্ছে।
সফরসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল সকালে ঢাকা থেকে রাষ্ট্রপতি হেলিকপ্টারযোগে পাবনায় পৌঁছাবেন। পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করবেন। পাবনা সার্কিট হাউসে গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে সোয়া ১টায় জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধু চত্বরের নামফলক উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বেলা দেড়টায় তিনি শহরের আরিফপুর কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে তাঁর মা-বাবা, আত্মীয়স্বজন ও রাজনৈতিক নেতাদের কবর জিয়ারত করবেন।
এরপর স্কয়ার বাগানবাড়িতে স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী ও স্কয়ার মাতা অনিতা চৌধুরীর পারিবারিক কবরস্থান পরিদর্শন করবেন। পরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন শেষে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর সার্কিট হাউসে ফিরে রাত যাপন করবেন।
আগামী ১৬ মে সকাল ১১টায় পাবনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি। তিনি পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। এ দিন বিকেল ৩টায় সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে তাঁকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এতে প্রায় আড়াই হাজার আমন্ত্রিত অতিথি উপস্থিত থাকবেন।
১৭ মে সকালে পাবনা ডায়াবেটিক সমিতি পরিদর্শন ও শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দিন বিনোদন পার্ক পরিদর্শন করবেন। এরপর সার্কিট হাউসে রাত্রি যাপন করে ১৮ মে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
রাষ্ট্রপতির এই সফর ঘিরে পুরো পাবনা জেলাকে নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। প্রায় তিন হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এসএসএফ, পিজিআর, ডিজিএফআই, এনএসআই, পাবনা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় অনুষ্ঠানস্থলগুলো পরিদর্শন ও তদারকি করছেন।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রাষ্ট্রপতির বাল্যবন্ধু বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা প্রেসক্লাবের ২২তম সদস্য। পরে তাঁকে প্রেসক্লাবের সাধারণ সভায় আজীবন সদস্য করা হয়। বর্তমান রাষ্ট্রপতি ১৯৭৫ সালে দৈনিক বাংলার বাণীর জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকালে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য হন। আমরা রাষ্ট্রপতির আগমনে আনন্দিত, উৎফুল্ল এবং আবেগাপ্লুত।’
বীরমুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বলেছেন, তিনি প্রেসক্লাবের মঞ্চে বসবেন না। সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় কাটাবেন।’
প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ তাদের প্রিয় অভিভাবকে বরণ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। দেড়শ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে।
পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ এনটিভি অনলাইনকে জানান, রাষ্ট্রপতিকে বরণ উপলক্ষে প্রেসক্লাব ভবনে আলোকসজ্জা এবং সংস্কারসহ নানা প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির ঘনিষ্ঠ বাল্যবন্ধু পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি প্রফেসর শিবজিত নাগ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের কয়েকটি আড্ডাস্থলের একটি ছিল পাবনা প্রেসক্লাব। সেই মো. সাহাবুদ্দিন আজ দেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে প্রেসক্লাবে আসবেন। এ যে কী আনন্দের, তা বলে বোঝানো যাবে না। ’
এদিকে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনা সফল করতে স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুকে আহ্বায়ক ও পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শিবজিত নাগ ও সাবেক সম্পাদক আব্দুল মতীন খানকে সদস্য সচিব করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই অনুষ্ঠান গোটা পাবনাবাসীর। লক্ষাধিক মানুষ এই সমাবেশে যোগ দেবে। আমরা অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত ও স্বতঃর্স্ফূত করতে সব পদক্ষেপ নিয়েছি।’
নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব আব্দুল মতীন খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রপতি আমাদের গৌরব। তাঁর সম্মান রক্ষার্থে আমরা যা যা করণীয় তাই করব ইনশা আল্লাহ। এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনার জন্য আমরা প্রস্তুত। সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এটি একটি আনন্দঘন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হবে।’