লকডাউনের প্রথম দিন কঠোর ছিল পুলিশ
‘কঠোর লকডাউনের’ প্রথম দিন রাজধানী ছিল কার্যত ফাঁকা। মানুষ খুব বেশি একটা ঘর থেকে বের হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। অকারণে বের হওয়ার কারণে কাউকে কাউকে গুনতে হয়েছে জরিমানা। মামলাও হয়েছে।
তবে দিনের শুরুতে কর্মস্থলগামী চিকিৎসক, গণমাধ্যমকর্মী, জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মীদের আনাগোনা ছিল সড়কে। কেউ কেউ ভালোমতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারলেও কাউকে কাউকে পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। শিকার হতে হয়েছে হয়রানির। কয়েকজন চিকিৎসক এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন।
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাংলাদেশে নতুন করে আজ বুধবার ভোর থেকে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। রাজধানীর সব গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া রয়েছে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ টহল। এসব দৃশ্য সকাল থেকেই চোখে পড়ে।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে দেখা গেছে, কিছু কিছু সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে সব যানবাহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রিকশাও চলতে দেওয়া হয়নি সেসব সড়কে। এসব চেকপোস্টে গাড়ি থামিয়ে লোকজনের ‘মুভমেন্ট পাস’ দেখা হয় এবং রাস্তায় বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত পেশাদার লোকজনকে চেকপোস্ট অতিক্রম করার অনুমতি দিয়ে অন্যদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে সকালে হাসপাতালে যাওয়ার পথে চিকিৎসকরা ভোগান্তিতে পড়েন। তাদের মধ্যে কয়েকজন অভিযোগ জানিয়েছেন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজে (এফডিআরএস)। বিষয়টি জানিয়েছেন সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব রাহাত আনোয়ার চৌধুরী।
রাহাত আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ‘সকালে অফিস যাওয়ার সময় পুলিশ কয়েকজন চিকিৎসককে আটকেছিলেন মুভমেন্ট পাস ছিল না বলে। আমার কথা হচ্ছে, চিকিৎসা সেবা তো জরুরি কাজের আওতায় পড়ে। তাহলে চিকিৎসকদেরও পাস নিতে হবে?’
সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব রাহাত বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষকে সেবা দেবে কখন আর পাস নিয়ে ভাববে কখন? আমাদের এক চিকিৎসককে তো অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আরেকজনকে অনেক সময় দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছে বলেও আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এভাবে চললে কিন্তু চিকিৎসকদের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা দেবে।’
‘এদিকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে যানবহন না পাওয়ায় অনেকের যেতে সমস্যা হয়েছে। সরকারের উচিত, অন্তত চিকিৎসকদের আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করা’, যোগ করেন রাহাত আনোয়ার চৌধুরী।
আজকের দিনের ভোগান্তি নিয়ে ফেসবুকে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ইউরোলজি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মমিনুল ইসলাম। তাঁর এই স্ট্যাটাস ফেসবুকে ভাইরালও হয়।
মমিনুল ইসলাম তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আজ সকালে সিএনজি নিয়ে করোনা হাসপাতালে ডিউটিতে যাবার সময় জাহাঙ্গীর গেটে পুলিশ আটকালে পরিচয় দিই। হাসপাতাল আইডি দেখালে পুলিশ বলে, কসাইগিরি ফলাস, তোর কসাইগিরি বাইর করতেছি, লাত্থি দিয়া পা ভাইঙ্গা দিমু, ..... আরও কিছু ভাষা যা লেখার যোগ্য নয়....। মনে হলো যোগ্য সম্মানটাই পেলাম। এ অবস্থায় ডিউটি নিয়ে করণীয় কি? জানতে চাই।’
তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা রাতে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, তাঁরা এই ধরেনর কোনো অভিযোগ পাননি।
এআইজি আরও বলেন, ‘সারা দিনই পুলিশ মাঠে ছিল। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। তারপরও যদি এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, আমরা চেষ্টা করব এগুলো রোধ করার। আগামীতে যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটা দেখা হবে। আর চিকিৎসকদের নিরাপদে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পুলিশ সহায়তা করবে।’
সকালে সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশকে তল্লাশি করতে দেখা গেলেও দুপুর ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য। এই সময়ের মধ্যে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমণ্ডি-২৭, সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন ও তেজগাঁও এলাকায় দেখা গেছে, রাস্তায় চেকপোস্ট রয়েছে কিন্তু পুলিশকে নেই। এতগুলো স্থানের মধ্যে শুধু ফার্মগেটের একটি চেকপোস্টে দুজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। এসব স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় কোথাও কাউকে আটকাতে বা মামলা দিতে দেখা যায়নি।
রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল। মানুষের চলাচল ছিল খুবই সীমিত। প্রথম রোজা হওয়ায় বিকেলের দিকে কিছু মানুষকে দেখা যায়, ইফতার বিক্রির দোকানের সামনে। রাস্তায় কিছু রিকশাচালককে দেখা গেলেও যাত্রীসহ রিকশা খুব কমই দেখা গেছে।
বিকেল ৩টার দিকে দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার চিত্রগ্রাহক জীবন আহমেদ তাঁর পেশাগত কাজে যাচ্ছিলেন রাজধানীর আগারগাঁওয়ের দিকে। আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালে ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ তাঁকে আটকান এবং মামলা দেন।
জানতে চাইলে জীবন আহমেদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে কয়েকজনকে আটকানো হয়েছিল। আমিও সেখানে যাচ্ছিলাম ছবি তুলতে। প্রথমে আমার কাছে মুভমেন্ট পাস দেখতে চাওয়া হয়। তখন আমি সাংবাদিক পরিচয় দেই। এরপর আমার কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চান। তখন আমি বললাম, ভুলে বাসায় রেখে আসছি। তারপর আমাকে চার হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়।’
এ ব্যাপারে মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।