লকডাউনের মেয়াদ আরও সাতদিন বাড়তে পারে
চলমান লকডাউনে করোনা সংক্রমণ কমছে না, বরং আরও বাড়ছে। অবস্থা বিবেচনায় লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘আগামীকালের সভার আগে কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে লকডাউন বাড়ানোর পরার্মশ আগে থেকেই রয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, লকডাউন বাড়ার সিদ্ধান্ত হলে তা কয়েকদিনের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ না কমার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষকে আরও কঠোরভাবে সচেতন হতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অভ্যাস করতে হবে। সচেতনতা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষিদ বিভাগের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আরও এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে এ বিষয়ে আগামীকাল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় লকডাউন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে মন্ত্রিপরিষদ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হবে।
কোভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শক কমিটি দুই সপ্তাহ লকডাউনের সুপারিশ করেছিল। জাতীয় পরার্মশক কমিটির সুপারিশ অনুযায়ীই লকডাউনের মেয়াদ বাড়তে পারে।
লকডাউন বাড়বে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষিদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ অনুবিভাগ) রফিকুল ইসলাম বলনে, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আগামীকাল (সোমবার) মন্ত্রিপরিষিদ সচিবের সভাপতিত্বে অনলাইনে আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
চলমান লকডাউনে কোভিড-১৯ জাতীয় পরার্মশক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে জানা যায়, করোনা আক্রান্ত বাড়ছে।
চিঠিতে বলা হয় মন্ত্রিপরিষদ থেকে দেওয়া নির্দেশনা মানুষ সঠিকভাবে মানছে না। কমিটির মতে অন্তত দুই সপ্তাহরে জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
জাতীয় পরার্মশক কমিটির সুপারিশেই গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
এর আগে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ কমাতে গত ৫ এপ্রিল লকডাউন ঘোষণা করলেও, সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক, ইত্যাদি খোলার রাখার অনুমতি দিয়েছিল। এরই একদিন পরে রাস্তায় গণপরিবহনের সংকট দেখা দিলে বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে সিটি করপোরেশন এলাকা গণপরিবহণ চলার অনুমতি দেয় সরকার।
সর্বশেষ ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত সারা দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে টানা তৃতীয় দিনের মতো শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো নিয়মিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মহামারি এই ভাইরাসে আরও ১০২ জন মারা গেছেন।
এর আগে শুক্রবার ও শনিবার ১০১ জন করে মৃত্যুর কথা জানায় অধিদপ্তর। এ নিয়ে দেশে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩৮৫ জনে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুনভাবে তিন হাজার ৬৯৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বর্তমানে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল সাত লাখ ১৮ হাজার ৯৫০ জনে। নতুন সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার ১২১ জন। মোট সুস্থ হয়েছে ছয় লাখ ১৪ হাজার ৯৩৬ জন।