লকডাউনে বন্ধ রেল, বিপর্যস্ত শ্রমজীবীরা
করোনা মহামারি প্রতিরোধে সারা দেশ চলছে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন। বন্ধ রয়েছে সরকারি-বেসরকারি অফিসহ গণপরিবহণ ও ট্রেন পরিষেবা। এমন পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ট্রেনের ওপরে নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করা হকার, কুলি, দোকানদার, ফেরিওয়ালাদের মতো বিভিন্ন পেশার শ্রমজীবীদের রুটি-রোজগার।
রেলের চাকা বন্ধ থাকায় যেনো থমকে গেছে তাদের দৈনন্দিন জীবনও। বেকার হয়ে হতাশায় ভরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন এখান পাঁচশওর বেশি মানুষ।
গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সারা দেশের লকডাউন। বন্ধ হয়ে যায় রেল পরিষেবা। ভৈরব স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের সামগ্রী নিয়ে স্টল রয়েছে হকারদের। সেগুলিও বন্ধ। তার সঙ্গে যুক্ত পাঁচ শতাধিক হকার, কুলি, দোকানদার ও ফেরিওয়ালা। ট্রেন বন্ধ থাকায় তাদের জীবিকার অবস্থা বিপর্যস্ত।
স্টেশন এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মিলন মিয়া বলেন, ‘লকডাউনের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এজন্য আমাদের ব্যবসাও বন্ধ। পরিবার পরিজনসহ হোটেলের শ্রমিকদের নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন লকডাউন আর যেন দীর্ঘায়িত করা না হয়।’
আরেক হোটেল ব্যবসায়ী আলকাছ মিয়া বলেন, ‘লকডাউনের কারণে রেল স্টেশনের সব কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। হোটেল বন্ধ হয়ে গেলেও হোটেলে ভাড়া ও বাসা ভাড়া মওকুফ নাই। পড়ছে বকেয়া। এগুলো তো আমাকেই পরিশোধ করতে হবে। বড় ধরনের একটা ঋণগ্রস্ত হয়ে গেলাম। গত বছরের লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই আরেকবার বিপদে পড়ে গেলাম।’
শ্রমজীবী আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা দিনমজুর মানুষ। দেশে লকডাউনের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকায় কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরব।’
স্টেশনের কয়েকজন দিনমজুর বলেন, ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে এই স্টেশনে মজুরের কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করছি আমরা। লকডাউনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এখন আমাদের আর কোনো কাজ নেই। বেকার হয়ে পড়েছি সবাই। বাড়িতে থাকলে বউ বাচ্চারা টাকার জন্য বিরক্ত করে। পরিবারের চাহিদা মেটাতে না পেরে আমরা স্টেশনে বসে সময় কাটাচ্ছি।’
হকার বাদশা মিয়া বলেন, ‘এই স্টেশনে পাঁচ থেকে ছয় শতাধিক হকার-ফেরিওয়ালা কর্ম করে খায়। এদের সঙ্গে জড়িত রয়েছে পরিবারের প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। এখন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় সবাই বেকার হয়ে পড়েছে। রুজি-রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি সবাই।
ভৈরব রেলওয়ে হকার শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলাল মিয়া বলেন, ‘কবে ট্রেন চালু হবে কিংবা চালু হলেও পরিস্থিতি আগের মতো থাকবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সন্ধিহান।’
তারা বলেন, গত বছরের লকডাউনে আমরা বিভিন্ন ত্রাণ পেয়েছিলাম। এবারের লকডাউনে আমাদের হকার ফেরিওয়ালাদের কেউ কোনো ত্রাণ তো দূরের কথা, কেউ খোঁজখবরও নেয়নি। সরকার যদি আবারও লকডাউন বাড়ায় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’