শিশুধর্ষণের পর হত্যা : দুই আসামির খালাসের রায় চেম্বারে স্থগিত
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের নয় বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত।
আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের আদালত আজ সোমবার এ আদেশ দেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ্ এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আসামিরা হলেন—নিহত শিশুটির মামাতো ভাই উপজেলার বুখাইতলা বান্ধবপাড়া গ্রামের মেহেদী হাসান ওরফে স্বপন (২২) এবং একই গ্রামের সুমন জমাদ্দার (২০)।
রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি নিয়ে আজ এ আদেশ দেন আদালত। আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন ফকির। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ্।
আপিল এবং ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে গত ৩০ জুন হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মবিনের ভার্চুয়াল বেঞ্চ ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনকে খালাস দিয়ে রায় দেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম কিবরিয়া দুই আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। পাশাপাশি তাঁদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিল। সে একই উপজেলার বুখাইতলা-বান্ধবপাড়ায় নানা বাড়িতে থেকে স্থানীয় হাতেম আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর সকালে গরুকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য ওই বিদ্যালয়ের মাঠে যায় শিশুটি। দুপুরেও ঘরে না ফেরায় স্বজনেরা তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরদিন দুপুরে বাড়ির পাশের একটি বাগানে শিশুটির বস্ত্রহীন ও ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যায়।
খবর পেয়ে মঠবাড়িয়া থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পিরোজপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তদন্তে দেখা যায়, শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস এ ঘটনায় শিশুটির মামাতো ভাই মেহেদী হাসান স্বপনের সংশ্লিষ্টতা পান। পরে মেহেদী ও তাঁর সহযোগী সুমন জমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সুমন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, তিনি ও মেহেদী মেয়েটিকে বাগডাস দেখানোর লোভ দেখিয়ে বাগানে নিয়ে প্রথমে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি যাতে জানাজানি না হয়, সেজন্য পরে তাঁরা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে শিশুটিকে হত্যা করেন।
রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, শিশুটির বড় বোন বিথিকে ভালোবেসে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন মেহেদী। বিথির পরিবার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে স্বজনেরা মেহেদীকে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন। কিন্তু, তাতেও বিথির প্রতি আকর্ষণ কমেনি মেহেদীর এবং স্ত্রীর ওপর প্রায়ই নির্যাতন করতেন তিনি। একই বাড়িতে থাকায় ওই শিশুটি তাতে বাধা দিত। এ নিয়ে শিশুটির ওপর রাগ ছিল মেহেদীর। একপর্যায়ে মেহেদী তাঁর বন্ধু সুমনকে নিয়ে ফন্দি আঁটেন—শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করলে স্বজনেরা এ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সে সুযোগে বিথিকে অপহরণ করে পালিয়ে যাবেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশুটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়।
মামলায় ১৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় দেন আদালত।