সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করছে সরকার : মির্জা ফখরুল
সরকার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গণতন্ত্র হরণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৪ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি। এসময় তিনি বলেন, ‘বৈঠকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৫০তম অধিবেশনে উত্থাপিত ডিজিটাল যুগে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা জোরদার শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করে গণতন্ত্রকে হরণ করছে।’
দেশজুড়ে ‘জনশুমারি’ ও গৃহগণনার কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে পরিকল্পনামন্ত্রী স্বীকারোক্তিতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনশুমারি প্রকৃত পক্ষে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারের আমলে সব ধরনের সমীক্ষা জরিপ এবং তথ্য সংগ্রহের কাজ সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী হওয়ায় প্রকৃত তথ্য কখনই পাওয়া সম্ভব হয়নি। জনগণকে ও বিশ্ব জনমতকে বিভ্রান্ত করার জন্য, দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি করার জন্যই সরকার এই ধরনের নীতি বিবর্জিত কার্যকলাপ করে চলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সকল তথ্যের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এ বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সঠিক পদ্ধতিতে প্রকৃত জনশুমারি ও গৃহগণনার ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাচ্ছি।’
‘সরকার বন্যাকবলিত এলাকায় দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সরকার বানভাসি মানুষের মাঝে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষ করে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন সরকারের কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান নয়। অবিলম্বে দুর্গত মানুষের মাঝে খাদ্য, বস্ত্র, গৃহ নির্মাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থার জোর দাবি জানাচ্ছি।'
ফখরুল বলেন, ‘ইডিএফ’ নাম দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে সরকারের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের ফলে প্রকৃত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এখন ৩৪.০২ বিলিয়ন ডলার। ঐ ধরনের প্রায় সবটাই (ফোর্সডলোন অধিকাংশই রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের) পর্যবসিত হয়েছে। আইএমএফ এই ধরনের ঋণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অন্তর্ভুক্ত না করতে বলেছে। এই সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার অবয়বে আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার অর্থনীতির সকল নিয়মকানুন ভঙ্গ করে, রিজার্ভের সকল বিধি বিধান ভঙ্গ করে শুধু নিজেদের ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লাভবান করার জন্য রাষ্ট্রের এই ভয়াবহ ক্ষতি করে চলেছে। ইডিএফ ঋণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, ব্যবসা, স্থাপনা তৈরি করে দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ ক্ষতি সাধন করছে। সুদূরপ্রসারী প্রভাব সামাজিক অর্থনীতি ও সমগ্র অর্থনীতিকে দেউলিয়া করে ফেলবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন।’
বৈঠকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দেশের বন্যা পরিস্থিতির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য বিশেষ করে বন্যাবাহিত রোগ, ডায়রিয়া রোগের ওষুধ ও চিকিৎসা প্রদানের জন্য ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ ত্রাণ কমিটির বৈঠকে ৫ জুলাই পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ।