সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের
লকডাউন চলাকালে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় রোববার রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে পুলিশ সদস্য ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি। ওই ঘটনায় চিকিৎসক জেনির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় পুলিশের এই সংগঠন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম এই বিবৃতিতে সই করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈশ্বিক অতিমারি করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারি আদেশ বাস্তবায়নে গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগরীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ, হয়রানি ও অসহযোগিতার কিছু চিত্র গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। যা বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ওই স্থানে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে চেকপোস্ট চলাকালে জনৈক চিকিৎসককে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরিচয়পত্র দেখাতে বলেন। কিন্তু তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন; যা একজন পেশাদার ও সচেতন নাগরিকের কাছ থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি শুধু ওই পুলিশ সদস্যদের অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকে কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন; যা মিডিয়ার চিত্রে প্রতীয়মান হয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি নিজ পেশার পরিচয় বাদ দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরে পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং জাতির সামনে পেশাজীবী সংগঠনগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করেছেন।
বিজ্ঞপিতে আরও বলা হয়, গত ১৪ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে জড়িত সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাপ্তরিক পরিচয়পত্র আবশ্যিকভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ওই চিকিৎসক তা অমান্য করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তার পরিচয় প্রদান না করে নিজ মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করেছেন।
“ওই চিকিৎসক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদকালে যে শব্দ প্রয়োগ করেছেন তা অত্যন্ত অরুচিকর ও লজ্জাজনক। এক পেশার সদস্য হয়ে আরেক পেশার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি কী ভাষা প্রয়োগ করেছেন, তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের তুই বলে সম্বোধন করেছেন। ‘আমি কী সেটা এখন তোদের দেখাচ্ছি হারামজাদা’ বলে হুমকি দিয়েছেন।”
‘মহান মুক্তিযুদ্ধসহ জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বিশেষত চলমান বৈশ্বিক মহামারির এই দুঃসময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ সর্বজন স্বীকৃত। এ পর্যন্ত কর্তব্যরত অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৯১ জন পুলিশ সদস্য শাহাদাতবরণ করেছেন এবং ২০ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশে দেশমাতৃকার স্বার্থে সরকারের যথাযথ নির্দেশনা পালনে পুলিশের প্রতিটি সদস্য বদ্ধপরিকর। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার্থে পুলিশ সদস্যরা বৈশাখের এই তীব্র দাবদাহে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। পেশাগত বৈচিত্র্যের কারণে পুলিশের এই চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব পালনকালে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। করোনাকালে দেশের স্বার্থে ও মানুষের জীবন রক্ষার্থে এবং করোনার বিভীষিকা থেকে মুক্তি পেতে পুলিশের কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশে করোনা মহামারি মোকাবিলায় এবং করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় মেডিক্যাল সার্ভিসেস নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অব্যাহত কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সর্বদা কৃতজ্ঞ। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের প্রতি জনৈক চিকিৎসকের অপেশাদার ও অরুচিকর আচরণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। একজন গর্বিত পেশার সদস্য হয়ে অন্য একজন পেশাদার বাহিনীর সদস্যদের প্রতি কটাক্ষ ও অসৌজন্যমূলক আচরণ কখনোই কাম্য নয়। নিজ মন্ত্রণালয়ের বৈধ আদেশ লঙ্ঘন এবং কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জোর দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারি নির্দেশনা পালনে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছে।’
গত রোববার লকডাউনের পঞ্চম দিনে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে পরিচয়পত্র দেখতে চাওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান নারী চিকিৎসক ডা. সাঈদা শওকত জেনি। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নেটিজেনরা ওই ঘটনায় দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।