২২ থেকে ২৮ এপ্রিল মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ‘লকডাউন’ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপের মেয়াদ বাড়িয়ে আজ মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ প্রজ্ঞাপনে আন্তর্জাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচল, ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ পূর্বের সব বিধি-নিষেধ আরোপের কথা বলা হয়েছে।
গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে লকডাউন সংক্রান্ত প্রথম প্রজ্ঞাপনে এ সময়ের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প-কারখানা খোলা রাখা যাবে বলে ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া সারা দেশে গণপরিবহণ বন্ধ, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা, কাঁচাবাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপ করে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
দুটি প্রজ্ঞাপনই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখার উপসচিব মো. রেজাউল ইসলামের স্বাক্ষরে জারি হয়।
প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছে, তা নিচে হুবহু দেওয়া হলো :
(ক) সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে, বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে;
উল্লেখ্য, ১২ এপ্রিলের প্রজ্ঞাপনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও পরের দিন ১৩ এপ্রিল অপর এক প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার দেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলো খোলা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
(খ) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে;
(গ) সকল প্রকার পরিবহণ (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে, পণ্য পরিবহণ, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না;
(ঘ) শিল্প-কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে, শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে;
(ঙ) আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন—কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহণ, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড ১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে;
(চ) অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে;
(ছ) খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (টেকঅ্যাওয়ে/অনলাইন) করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানসমূহ বন্ধ থাকবে;
(জ) কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে;
(ঝ) বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে;
(ঞ) সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে;
(ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন;
(ঠ) স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবি নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে; এবং
(ড) উপর্যুক্ত নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়।