২৮ এপ্রিলের পর লকডাউন শিথিল করতে পারে সরকার
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের দুই সপ্তাহ আগে ২৮ এপ্রিল থেকে লকডাউনে চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করা হতে পারে।
তবে, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি এবং এই বিধি-নিষেধগুলো কী পরিমাণে শিথিল হবে, তা এখনই পরিষ্কার নয়।
এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ২৮ এপ্রিল নেওয়া হবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, “যদি বিধি-নিষেধগুলো শিথিল করা হয়, তবে আমাদের স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে এবং সরকার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতিটির কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবে।”
ফরহাদ হোসেন বলেন, ২৫ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিংমলগুলো পুনরায় চালু হওয়ার পর স্বাস্থ্য নির্দেশিকা নিশ্চিত করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে দূরত্ব বজায় রাখি, তাহলে কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিধি-নিষেধ মানলে অনেকটা ভালো ফলাফল পাব আমরা। সেজন্য স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দেওয়া হবে।
‘গণপরিবহণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’
শিথিল লকডাউন কেমন হবে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ জানান, এখানে অনেক বাধা থাকবে না। বিদ্যমান বিধি-নিষেধ সীমিত থাকবে। প্রতিদিনের জন্য কিছু গাইডলাইন থাকবে।
অফিস পরিচালনার বিষয়ে ২৮ এপ্রিলের মধ্যেই একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।
ফরহাদ হোসেন আরও জানান, তারা গণপরিবহণের চলাচল নিয়ে আলোচনা করছেন। কিন্তু এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, পুনরায় চালু হলে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা সরকার নিশ্চিত করবে।
গণপরিবহণে মাস্ক পরা এবং যথাযথ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধি প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়।
যদিও লকডাউন চলাকালীন গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ ছিল, তবুও সরকার প্রথম ধাপের লকডাউনের তৃতীয় দিন গত ৭ এপ্রিল সিটি করপোরেশন অঞ্চলে এর কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দেয়।
২৫ এপ্রিল থেকে পুনরায় খুলছে দোকানপাট
কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিংমলগুলো বন্ধ ছিল।
তবে, দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা আবার ব্যবসা চালু করার দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। তাদের যুক্তি দেখায়, গত বছর লকডাউনের সময় তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঈদুল ফিতর সাধারণত ব্যবসায়ের ব্যস্ততম সময়। কিন্তু, কোভিডের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে গত বছরের ঈদ উদযাপিত হয়। এতে ব্যবসায়ে বড় ক্ষতি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের যুক্তি গত বছরের অবস্থার পুনরাবৃত্তি তাদের জন্য ক্ষতিকর হবে। তাই, সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে গত ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দেয়।
আজ শুক্রবার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি নোটিশ জারি করেছে, যেখানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার শর্তে ২৫ এপ্রিল থেকে (সকাল ১০টা থেকে ৫টা) শপিংমলগুলো খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।
সবচেয়ে মারাত্মক মাস
করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মৃত্যু আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকার প্রথমে ১৮-দফা নির্দেশনা জারি করে। এই পরিস্থিতি এপ্রিলের শুরু থেকে এক সপ্তাহব্যাপী লকডাউন আরোপ করতে সরকারকে বাধ্য করে। তবে এই লকডাউন প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জন করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকার ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ আরোপ করে এবং ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত তা বাড়িয়েছে।
শুধু এপ্রিলেই করোনাতে আক্রান্ত হয় এক লাখ ২৪ হাজার ৯৩৫ জন এবং মারা যায় এক হাজার ৮২৩ জন। এপ্রিলের এই প্রথম ২৩ দিনের মৃত্যুর সংখ্যাই গত তিন মাস জানুয়ারি (৫৬৮), ফেব্রুয়ারি (২৮১) এবং মার্চের (৬৩৮) মোট মৃত্যুর সংখ্যার চেয়ে বেশি।
১৬ থেকে ১৯ এপ্রিলের মধ্যে দেশে করোনায় প্রতিদিন ১০০ জন মারা গেছে। পরবর্তী তিন দিন মৃতের সংখ্যা ৯০-এরও বেশি ছিল।
এই মাসে করোনাভাইরাসে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, আগামী জুন নাগাদ দেশের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে।