পাপন গ্রেপ্তার, ‘ঢিল’ মেরেছিলেন জুতা দিয়ে!
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ‘যৌন হেনস্তার পর জুতাপেটা’ করার ঘটনায় জড়িত ছাত্র রিফাত আদনান পাপনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ক্যাম্পাস থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী পাপনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রিফাত আদনান পাপন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। আর ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে পড়েন।
জুতাপেটা নয়, জুতা দিয়ে ঢিল!
এদিকে পাপন গতকাল সোমবার রাতে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ছাত্রী লাঞ্ছনার কথা স্বীকার করে দাবি করেন, তাঁর সাথে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘জানি আমার বিবৃতির কোনো দাম থাকবে না, তাই সব ভাইবোন, বন্ধুদের বলে যাচ্ছি-আমি অপরাধী, কারণ ওর (ছাত্রীর নাম দেওয়া হলো না) সাথে আমার চার বৎসরের সম্পর্ক ছিল, সবচেয়ে বড় অপরাধ এটা। সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর গতকাল (রোববার) আমি তার সামনে গেছি কিছু প্রশ্ন করতে। আমি চিনতাম না তার বর্তমান বয়ফ্রেন্ড কে। তাই গিয়ে প্রশ্ন করছি যে ভাই আপনার নাম কি অর্ক? উনি না করার পর বুঝলাম সে আরেকটা নতুন কেউ। কারণ আমার সাথে সম্পর্ক থাকার সময় সে আরেক ফোন আর ফেসবুক আইডি দিয়ে অর্ক নামের একজনের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছিল।
পরবর্তীতে কাল ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময় ও (ছাত্রীর নাম দেওয়া হলো না) কথা কেড়ে নেয়, আমি তাকে জিজ্ঞাস করি যে কেন তুমি এখনো আমাকে ফোনে বা হোয়াটস আপয়ে গালিগালাজ করে মেসেজ করো? আর যেন এই কাজ না করে সেটা বলি। সে (ওই ছাত্রী) তখন বলছে- তোর মাকে বলিস যেন আমাকে ফোন না দিয়ে চামচামি না করে, আরো অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে। মার সন্তান তো,...তাই তাকে অসম্মান করাটা মানতে পারিনি, রেগে যাই। তখন নয়ন আর প্রতীক আমাকে সরিয়ে আনে। সহ্য না করতে পেরে জুতা খুলে ঢিল মারি। লাগছে কি না জানি না। এরপর চলে আসছি। এই হলো ঘটনা, যারা ঐখানে ছিল তাদের প্রশ্ন করলেও এই উত্তরই দিবে। যদি তাদের বাধ্য করা না হয় তবে।’
এদিকে যৌন হেনস্তার ঘটনায় পাপনের বিরুদ্ধে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্রী। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রিফাত আদনান পাপনকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল প্রক্টরিয়াল কমিটি।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত রোববার সন্ধ্যায় স্নাতকোত্তর শ্রেণির ওই ছাত্রী তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রিফাত আদনান পাপন তাঁকে হেনস্তা করার একপর্যায়ে জুতা দিয়ে মারধর করেন। পরে আশপাশের শিক্ষার্থীরা ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করেন।
যৌন হেনস্তা ও মারধরের বিষয়টি ছাত্রী বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক হাসানুজ্জামান শ্যামল এবং ‘যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ কেন্দ্রের আহ্বায়ক অধ্যাপক ইয়াসমিন হককে মৌখিকভাবে অবহিত করেন।
ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের অনিয়মিত শিক্ষার্থী রিফাত আদনান পাপন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দোকান ভাঙচুর ও এক বিদেশি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে এর আগেও দুবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এমদাদুল হক।