‘জিম্মিদের মধ্যে তাহমিদও ছিলেন’
হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় তাহমিদ হাসিব খানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগের মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর।
আদালতের রেকর্ড করা মামলার কার্যক্রমের নথি থেকে এ কথা জানা গেছে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসানের আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে এ কথা বলেন।
একই আদালতে আজ বুধবার আরো দুজন পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদিনই হুমায়ুন কবীর সাক্ষ্যে যা বলেছেন, সেই সংক্রান্ত নথি আদালতের এজলাসে দেখা যায়।
সেদিন হুমায়ুন কবীর আদালতে বলেন, ‘হলি আর্টিজানে জঙ্গিরা ২২ জনকে হত্যা করে এবং বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করে। জিম্মিদের মধ্যে তাহমিদও ছিলেন। জঙ্গিরা তাহমিদ ও আবুল হাসনাত রেজা করিমকে ছাদে নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। তাহমিদের হাতে অস্ত্র দেখা যায়। কমান্ডো বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাহমিদসহ জিম্মিদের উদ্ধার করে। পরে তাঁদের সবাইকে কাউন্টার টেররিজম কার্যালয়ে আনা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় এই শর্তে যে যখনই ডাকা হবে তখনই তাঁদের আসতে হবে ও ঘটনার বর্ণনা দিতে হবে, যা হামলার ঘটনার মামলার রহস্য উদঘাটনে সহায়ক হবে।’
তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষ্যে আরো বলেন, ‘তাহমিদের সঙ্গে জিম্মায় যাওয়া অনেকে ডাকামাত্রই এসেছেন। অনেকে আদালতে ১৬৪ ধারায় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিও দিয়েছেন। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাহমিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি আসেননি। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাহমিদকে কার্যালয়ে এসে বক্তব্য দেওয়ার জন্য ১০ ও ২১ জুলাই নোটিশ পাঠানো হয়।’
পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন সাক্ষ্যে আরো বলেন, তাহমিদ ইচ্ছে করেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে পুলিশের কাছে বক্তব্য দেননি। জঙ্গিদের সঙ্গে হলি আর্টিজানের ছাদে দেখা যাওয়ায় এবং নোটিশের পরও কার্যালয়ে এসে বক্তব্য না দেওয়ায় তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তথ্য গোপনের অভিযোগে মামলাও করা হয়।
পরবর্তী সময়ে তাহমিদের আইনজীবীরা হুমায়ুন কবিরকে জেরা করেন। এরপর মামলায় আরো অনেকে সাক্ষী দেন।
এদিকে আজ আদালতে এ মামলায় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক মতিউর রহমান ও কনেস্টেবল মো.সাখাওয়াত সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যে তাঁরা সবাই তাহমিদের বিরুদ্ধেই কথা বলেন। সবাই বলেন, তাহমিদ ইচ্ছে করেই পুলিশকে কোনো সহযোগিতা করেননি। এমনকি মামলার সংশ্লিষ্ট কোনো বক্তব্য দেননি। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন। আজ এ মামলায় তাহমিদ আদালতে হাজির ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্জ সহকারী মোহাম্মদ শাহীন এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাহমিদের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগে ভাটারা থানায় গত বছরের অক্টোবরে ‘নন প্রসিকিউশন’ মামলা করা হয়। তারপর থেকে তিনি জামিনে আছেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত বছরের ৩ আগস্ট হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাহমিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পরই তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশকে অসহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়।
১০ জানুয়ারি ঢাকার মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান এ মামলায় তাহমিদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।
গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি-ব্লকের একটি বাসা থেকে রাত ৯টার দিকে তাহমিদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর তাঁকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
এজাহার থেকে জানা যায়, ১ জুলাই রাত ৯টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। ওই দিন রাতে উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী ও রেস্তোরাঁর এক কর্মী।
এ নিয়ে হামলার পর ২৮ জন নিহত হয়। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপাত্র আমাক হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স।
এ ঘটনায় এক ভারতীয় নাগরিকসহ ৯ ব্যক্তি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে বিভিন্ন সময়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিম , কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় আটক রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ও রাজীব গান্ধীকে গুলশান হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।