লতিফের আরো ১০ মামলা স্থগিত, পেলেন জামিন
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে করা আরো ১০ মামলা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এসব মামলায় তাঁকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কেন তাঁকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নিজামুল হক ও বিচারপতি মো. ফরিদ আহমদ শিবলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ প্রাথমিক শুনানি শেষে এসব আদেশ দেন।
আইন সচিব, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্ট সাতজনকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
শুনানিতে লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে অংশ নেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবির।
এ বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এনটিভি অনলাইনকে বরেন, ‘আজ ১০টি মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর জামিন হয়েছে। গত ২৬ মে একই অভিযোগে আরো সাত মামলায় হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আরো পাঁচটি মামলা থাকলেও সেগুলোতে যেহেতু গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়নি, তাই তাঁর মুক্তিতে বাধা নেই।’
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ এ কে এম মনিরুজ্জামান কবীর এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে মোট ২১টি মামলা রয়েছে। আজকে ১০টি এবং আগে সাতটি মামলায় তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আরো পাঁচটি মামলায় বিচারাধীন থাকায় তিনি এখনই বের হতে পারবেন না। এসব মামলার জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার কোর্টে আবেদন করা হবে।’
জামিনের বিষয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী দেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ নিজ দেশে বিচার করতে হলে মামলার আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সংবিধানের ৩৫(২) ধারা অনুযায়ী একই অপরাধের ঘটনায় একাধিক মামলা চলতে পারে না। এই বিবেচনায় মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে জামিন চাওয়া হয়। আদালত শুনানি শেষে তাঁকে ১০ মামলায় জামিন দিয়েছেন।’
গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে কটূক্তি করেন তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দেশ ও দেশের বাইরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন সাবেক এই মন্ত্রীর বিচার দাবি করে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে একের পর এক মামলা হয়। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এর পর মহাজোট সরকার মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে অপসারণ করে। সারা দেশে তাঁর বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ২১টি মামলা আমলে নেওয়া হয়।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন লতিফ সিদ্দিকী। ২৫ নভেম্বর ধানমণ্ডি থানায় আত্মসমর্পণ করেন তিনি। পরে তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক কারাগারে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তিনি নিম্ন আদালতে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করা হয়। পরে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ ধারা অনুযায়ী মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন লতিফ সিদ্দিকী।