ব্রাজিলের গম খাওয়ার উপযোগী দাবি করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম মানুষের খাবার উপযোগী দাবি করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার হাইকোর্টে খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদন দাখিল করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কান্তি বিশ্বাস। আগামী ৮ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
urgentPhoto
খাদ্য অধিদপ্তর গম খাওয়ার উপযোগী বলে দাবি করলেও তাদের প্রতিবেদনেই বলা আছে, গমে ভাঙা দানা, ওজনে কম, পোকার অস্তিত্ব আছে। এসব দেখিয়ে রিটকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, প্রতিবেদনগুলো অসম্পূর্ণ। জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে তিনি আরো উন্নততর পরীক্ষা করার আবেদন জানান।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কান্তি বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, খাদ্য আমদানির নিয়ম মেনে বন্দরে আসার পর সেখানেই ওই গমের প্রথম দফা পরীক্ষা হয়। পরে খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষাগার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে আরো তিন দফা পরীক্ষা করা হয়। এসব পরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো আদালতে দাখিল করে তিনি বলেছেন, ‘কোনো পরীক্ষাতেই আমদানি করা গম খাবার অনুপযোগী প্রমাণিত হয়নি।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরো বলেন, ‘মামলা আদালতে আসার পর বলা হলো তা (গম) খাদ্য উপযোগী কি না (ফুড কনসাম্পশন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কি না)। এ কারণে খাদ্য অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা করে আমিষের মাত্রা, আর্দ্রতার মাত্রা এবং গমের ওজন, আকৃতি যা আছে তাতে এমন কোনো কিছু পায়নি যেটা খাওয়ার যোগ্য নয় প্রমাণ করে। তা বিলির ব্যবস্থাও করা যায় বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।’
রিটকারীর আইনজীবী ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘খাদ্য অধিদপ্তরের পরীক্ষার প্রতিবেদনে মন্তব্যে বলা হয়েছে, চুক্তির সঙ্গে আমদানি করা গমের মিল নেই। তাদের প্রতিবেদনেই বলা আছে, আমদানি করা গমের মধ্যে পোকামাকর পাওয়া গেছে। শুধু একটা না অনেক প্রতিবেদনে এ কথা আসছে। কোনো খাদ্যপণ্য খাওয়ার উপযোগী কি না সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে আলফা টক্সিন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হবে। সরকার কিন্তু আলফা টক্সিন পরীক্ষা বা অন্য কোনো পরীক্ষা আনেনি যার মাধ্যমে বলা যাবে যে এ গম খাওয়ার উপযোগী।’
রিটকারীর আইনজীবী প্রতিবেদনগুলো নিরীক্ষার জন্য সময় চাইলে আদালত তাঁদের দুই দিন সময় দেন।
সম্প্রতি ব্রাজিল থেকে আনা গমের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ‘দেখতে খারাপ’ এসব গম খাবারের অনুপযোগী। গমের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। তবে গত ২১ জুন জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া এক বিবৃতিতে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দাবি করেন, খাদ্য অধিদপ্তরে নিম্নমানের গম আমদানির বিষয়ে যেসব কথাবার্তা হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।
গত ২৪ জুন খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের পুনঃপরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী পঁচা মানুষের খাবার অনুপযোগী কোনো গম পাওয়া যায়নি।
গত ২৯ জুন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পঁচা গম আমদানি করা হয়েছে দাবি করে তা তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের বিবরণে বলা হয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্রাজিল থেকে সম্প্রতি সরকার প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করে বিদেশ থেকে দুই লাখ মেট্রিকটন পঁচা-নষ্ট গম আমদানি করা হয়েছে।