‘ভারতকে যা দিয়েছি সেটি তারা সারা জীবন মনে রাখবে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা কোনো প্রতিদান চাই না। আমরা ভারতকে যা দিয়েছি সেটি তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
আজ বুধবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজারে প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে করা সাংবাদিকনেতা মনজুরুল আহসান বুলবুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন পত্রিকা এসব নিউজ করেছে তা আমি জানি না। আমি কারো কাছে কোনো প্রতিদান চাই না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা কারো কাছে কিছু চাই না। আমি নিতে পছন্দ করি না। সব সময় অন্যকে দিতে বেশি পছন্দ করি। আর আমরা ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারা জীবন মনে রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু ভারত গিয়েছি ক্ষমতায় আসতে এটি তো বলবেই। কিন্তু ২০০১ সালে তো ভারত ও আমেরিকা আমাকে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু আমি বলেছিলাম, বাংলাদেশের মানুষের ৫০ বছরের গ্যাস থাকলে তখন দিব। কিন্তু খালেদা জিয়া মুচলেকা দিয়েছিল ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বিক্রি করবে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে গ্যাস পায়নি, দিতেও পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় আসার জন্য মুচলেকা দেয় আমি সেই দলের না। ক্ষমতায় আসার জন্য আমি মুচলেকা দেই নাই। তখন আমি শুধু বলেছিলাম আল্লাহ জন দেখে ধন দেন। তারা গ্যাসও পায়নি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতা দখল করেই তো ভারত সফরে যেতে হয়। খালেদা জিয়া কি ক্ষমতায় এসে ভারত যায়নি? ক্ষমতা গ্রহণের পরই তো ভারত সফরে যায় আগে। বিএনপি নেতারা কি সেটি ভুলে গেছেন? বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় কি গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল? সেটি তো অনেক বেশি দরকার ছিল। কই বিএনপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে তো গঙ্গা চুক্তি সফল করতে পারেননি। সেটি তো আমি প্রথমবার ক্ষমতায় এসে করেছিলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ছিল। এ দেশে বিভিন্ন সরকার ক্ষমতায় থেকে তাদের মদদ দিয়েছে। আপনাদের মনে নেই ১০ ট্রাক অস্ত্রের কথা? আপনারা ভুলে গেছেন? আপনারা ভুলে যান আমি ভুলি না।’
সীমান্ত হত্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন সীমান্ত হত্যা নেই বললেই চলে। সেটি কমিয়ে এনেছি আমরা, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তারা তো সেটি করতে পারেনি।’
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটি লবিং করে পেতে হবে সেটির বিষয়ে আমার কোনো প্রবৃত্তি নেই। এসব আমি চাই না। এ বিষয়ে আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দুই দিনের সরকারি সফর শেষে গত ২৬ মে রাতে দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে গত ২৫ মে সম্মানিত অতিথি হিসেবে তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যোগ দেন। বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন করেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেন তাঁরা। ২৬ মে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি লিট ডিগ্রি গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা।
দেশে ফেরার আগে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এই সফরে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ‘জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি’ এবং কলকাতায় ঐতিহাসিক ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু’ জাদুঘর পরিদর্শন করেন।