মিয়ানমার থেকে আসছে কোরবানির গরু
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে গরুসহ গবাদিপশু আসছে। পশুবোঝাই ট্রলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে করিডোর দিয়ে দেশে ঢুকছে। এ মুহূর্তে কয়েক হাজার গবাদিপশু টেকনাফের ব্যবসায়ীদের কাছে মজুদ রয়েছে। এভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের কোরবানির বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশের চাহিদা মেটাতে পারবে মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া গবাদিপশু। এর ফলে বাজারে এবারের কোরবানিতে গবাদিপশুর সংকট হবে না বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বাধা সৃষ্টি না করলে কোরবানির আগেই আরো ২০ হাজার গবাদিপশু মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
এর আগে দীর্ঘ কয়েক মাস মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ ছিল। মিয়ানমারের আকিয়াব ও কাছাকাছি এলাকা থেকে এসব গবাদিপশু আমদানি হয়ে থাকে। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে পৌঁছাতে পশুবোঝাই ট্রলারগুলোকে ১২ ঘণ্টার মতো ট্রলার চালিয়ে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদী অতিক্রম করতে হয়।
ভারত থেকে গবাদিপশু আমদানি বন্ধ থাকায় টেকনাফের ব্যবসায়ীরা অনেকটা সুবিধায় রয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। গত বছর এ সময়ে প্রচুর গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে বলে তাঁরা দাবি করেন।
করিডোরের গবাদিপশু আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত গবাদিপশু মজুদ ও আমদানি হলেও এখন বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না। বছরের এ সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা গরু কেনার জন্য এলেও এ বছর এখনো ব্যবসায়ীদের আসা শুরু হয়নি।
অন্য আমদানিকারক মো. শরীফ জানান, মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পাঁচ শতাধিক গরু-মহিষ তাঁর কাছে মজুদ রয়েছে। মিয়ানমারে আরো পাঁচ হাজার গরু-মহিষ আমদানির অপেক্ষায় আছে।
শাহপরীর দ্বীপ-টেকনাফ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সরাসরি ট্রাকে করিডোর থেকে গবাদিপশু পরিবহন সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ভোগান্তির পাশাপাশি খরচও কিছুটা বেড়েছে।
টেকনাফ স্থলবন্দরের কাস্টমস কার্যালয়ের সুপার হুমায়ূন কবির বলেন, শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে জুলাই মাসে ৪২৫টি গরু, ৭১০টি মহিষ ও সাতটি ছাগল আমদানি হয়েছে। আগস্টে এক হাজার ৯৫৪টি গরু, এক হাজার ৬২টি মহিষ ও ৩৮টি ছাগল এবং ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫৯৭টি গরু, ১৩৩টি মহিষ ও তিনটি ছাগল আমদানি হয়েছে। প্রতিটি গরু-মহিষের জন্য ৫০০ টাকা ও ছাগলের জন্য ২০০ টাকা রাজস্ব দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। বিজিবির তত্ত্বাবধানে শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে রাজস্ব আদায় করা হয়।
করিডোরে গবাদিপশু কিনতে আসা কক্সবাজারের ঈদগাহ এলাকার ব্যবসায়ী সৈয়দ হোসেন, খরুলিয়ার মমতাজ আহমদসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার গবাদিপশুর দাম কিছুটা বেশি। টেকনাফ থেকে গবাদিপশু কিনে নিয়ে যেতে তাঁদের তেমন কোনো সমস্যা হয় না বলে জানান। পথে কোথাও চাঁদা দিতে হয় না বলেও জানান ওই ব্যবসায়ীরা।
টেকনাফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বলেন, যেভাবে আমদানি হচ্ছে তাতে টেকনাফে এবার কোরবানির পশু সংকট হবে না বলে মনে করেন তিনি।
সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান বলেন, করিডোরে ব্যবসায়ীদের আর্থিক নিরাপত্তা রয়েছে। ছিনতাই-ডাকাতিসহ কোনো ধরনের সমস্যায় তাঁদের পড়তে হয় না।
এ পর্যন্ত গবাদিপশু আমদানিতে মিয়ানমার বাধা সৃষ্টি না করলেও কয়েক দিন থেকে তারা নতুন করে বাধা সৃষ্টি করছে। গত রোববার শাহপরীর দ্বীপে আসার পথে বঙ্গোপসাগর থেকে ১৪টি গরুবোঝাই একটি ট্রলার ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)। ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরের শাহপরীর দ্বীপ বদর মোকাম পয়েন্টসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে বিজিপির একটি দল দুটি স্পিডবোট নিয়ে এসে চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে তাদের ধাওয়া করে। এ সময় ট্রলারে থাকা মাঝি জাফর আলমসহ চারজন প্রাণরক্ষার্থে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। মাছ শিকারের নৌকা তাদের উদ্ধার করে শাহপরীর দ্বীপে নিয়ে আসে। গরুবোঝাই ট্রলারের মালিক শাহপরীর দ্বীপের নুরুল আমিন বল্লা। এ ঘটনার পর করিডোরের গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে সাময়িক আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যে ঘটে থাকে। নাফ নদীর তীরবর্তী মিয়ানমার সীমানায় কয়েকটি বিজিপি ক্যাম্প রয়েছে। তাদের ট্রলারপ্রতি টাকা দিতে হয়, না হলে তারা এ ধরনের বাধার সৃষ্টি করে।
বিজিবি শাহপরীর দ্বীপ কোম্পানি কমান্ডার মতিউর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার সীমানায় ওই ঘটনা ঘটেছে। গবাদিপশুবাহী ট্রলার নিরাপদে যেন করিডোরে আসতে পারে, এ জন্য বিজিবি প্রায় সময় সাগরে টহল দেয়।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কিছু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার আশায় আগে থেকে গরু কিনে মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, গরু মোটাতাজা করতে কোনো ইনজেকশন বা ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে না।