রাকিব হত্যায় শরিফ ও মিন্টু খানের ফাঁসির আদেশ
খুলনায় কমপ্রেসার মেশিনের হাওয়া পেটে ঢুকিয়ে নির্মমভাবে শিশু রাকিবকে হত্যার দায়ে গ্যারেজ মালিক মো. শরিফ ও তাঁর চাচা মিন্টু খানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার অপর আসামি বিউটি বেগমকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১টায় খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক দিলরুবা সুলতানা এই রায় দেন।
urgentPhoto
মামলার এক আসামি খালাস পাওয়ায় রায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতের বাবা, মা, বোনসহ এলাকাবাসী।
গত ৩ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শিশু রাকিবকে।
আজ রায় দেওয়ার নির্ধারিত দিন থাকায় সকাল ১০টা থেকে আদালত প্রাঙ্গণ উৎসুক জনতায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বেলা পৌনে ১২টায় কড়া পুলিশ পাহারায় তিন আসামি মো. শরিফ, মিন্টু খান ও বিউটি বেগমকে আদালতে হাজির করা হয়।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে উপস্থিত হন বিচারক দিলরুবা সুলতানা। জনাকীর্ণ আদালতকক্ষে পিনপতন নীরবতার মধ্যে বিচারক দুপুর পৌনে ১টায় রায় পড়া শুরু করেন। ৬৩ পৃষ্ঠা রায়ের শুধু আদেশের অংশটুকু পড়ে শোনান তিনি।
আদেশে মো. শরিফ ও মিন্টু খানকে রশিতে ঝুলিয়ে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর আসামি বিউটি বেগমকে খালাস দেন আদালত।
বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, রায়ের কপি আসামিদের পড়ে শোনানোর পর তা উচ্চ আদালতে পাঠানো হবে। উচ্চ আদালতের বিধি-বিধানমতে দণ্ডাদেশ পাওয়া ব্যক্তিরা ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
রায় ঘোষণার পর আসামি শরিফ ও মিন্টু খানের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আদালত থেকে পুলিশ পাহারায় বের করার সময় তাঁরা সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। তবে এই সময় আদালত প্রাঙ্গণে টুটপাড়া এলাকাবাসী বিউটি বেগমের শাস্তির দাবি করে চিৎকার করতে থাকেন।
নিহত রাকিবের বাবা মো. নূরুল আলম রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আসামি বিউটি বেগমের পরকীয়ার ঘটনা দেখে ফেলায় তাঁর ছেলে রাকিবকে হত্যা করা হয়। আর সেই বিউটি বেগমের খালাস তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বিউটি বেগমেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে রায় ঘোষণার সময় রাকিবের মা লাকি বেগম অচেতন হয়ে পড়েন। চেতনা ফিরে আসার পর তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই তাঁরা বিউটির খালাস মানবেন না।
খুলনার প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট কাজী আবু শাহিন জানান, ঘটনার পর থেকে সরকার খুব আন্তরিকতার সঙ্গে মামলাটি মনিটরিং করছিল। এবং মাত্র ১০ কার্যদিবসে ৩৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এই রায় দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সুলতানা রহমান এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে আখ্যা দেন। বিউটি বেগমের খালাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রায় দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে এ বিষয়ে আপিল করা হবে কি না। তবে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে আসামিপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম তুষার জানান, আসামিদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, অনেক সময় ঘটনা দ্রুত করতে গেলে ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়।