জামিন পেলেন খালেদা জিয়া
নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে আগামী ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
urgentPhoto
ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আমিনুল ইসলাম আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ আদেশ দেন।
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আদালতে হাজির হয়ে শুনানিতে অংশ নেন খালেদা জিয়া। ১২টা ২৫ মিনিটে মামলার শুনানি শুরু হয়ে ১২টা ৩৫ মিনিটে শেষ হয়। এ সময় খালেদা জিয়াকে এজলাসের সামনে একটি চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়।
শুনানির শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে বলেন, ‘একই ঘটনায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ও মামলা ছিল। হাইকোর্টে তাঁর মামলা বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার চলছে। তবে উচ্চ আদালত এ মামলায় এর আগে জামিন দিয়েছিলেন এবং এ মামলা বাতিলে রুল বাতিল করে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন। তবে উচ্চ আদালত আদেশে জামিন বহাল রাখার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখা হোক।’
এ পর্যায়ে আদালত দুদকের আইনজীবীকে বলেন, জামিনের বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কি না?
এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, উনি রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা অপচয় করেছেন। তাই মামলার কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক। আদালত এ পর্যায়ে দুদকের আইনজীবীকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন জামিনের বিষয়ে আপনার কোনো বক্তব্য আছে কি না? তখন দুদকের আইনজীবী বলেন, এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আপনি সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। এ পর্যায়ে আদালত খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে মামলার চার্জ গঠনের শুনানির জন্য ২৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।
পরে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়া বিশেষ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।
আদালত প্রাঙ্গণে হৈ চৈ
এর আগে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে দুপুর ১২টার দিকে আদালতে যান খালেদা জিয়া। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা একত্রিত হয়ে খালেদা জিয়ার উদ্দেশে স্লোগান দেন। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আইনজীবীদের দমানোর চেষ্টা করে। আইনজীবীদের মিছিলে পুলিশ বাধা দিতে গেলে পুলিশ-আইনজীবীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া এবং ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এসে সবাইকে শান্ত করেন।
গত ১৮ জুন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
মামলাটি বাতিলে খালেদা জিয়ার রিট আবেদন ও এ-সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁকে দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে তাঁর জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে নিম্ন আদালতকে বলেছেন উচ্চ আদালত।
যে কারণে মামলা
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।
পরে ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।
অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
পরে এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া।
২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।